অভিরূপ দাস: রোগীর মৃত্যুর পর টাকা বকেয়া থাকলেও আটকে রাখা যাবে না দেহ! বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কড়া নির্দেশ দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। সোমবার এই মর্মে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘রোগীর পরিবার টাকা বকেয়া রেখেছে অথবা অন্য কোনও কারণকে হাতিয়ার করে বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলি কোনওভাবেই দেহ আটকে রাখতে পারবে না। যদি রোগীর পরিবারের কোনওরকম বকেয়া থাকে তবে তা জানাতে হবে কমিশনকে। বকেয়া টাকা মৃতের পরিবারের কাছ থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব নেবে কমিশনই। কিন্তু দেহে আটকে রেখে পরিবারকে হয়রানির মুখে ফেলা যাবে না।’
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ‘রোগীর মৃত্যুর পাঁচঘণ্টার মধ্যে দেহ তুলে দিতে হবে পরিবারের হাতে। এর চেয়ে বেশি সময় রাখলে তার যথাযথ কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে। অনেক সময় মৃতের পরিবারের কোনও সদস্য ভিনরাজ্যে বা দেশের বাইরে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাঁরা অনুরোধ করেন দেহ কিছুক্ষণের জন্য মর্গে রেখে দিতে। শুধুমাত্র সেই পরিস্থিতিতেই পাঁচঘন্টার বেশি দেহ হাসপাতালে রাখা যেতে পারে।’ এরপরও যদি কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম দেহ আটকে রাখে, তাহলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন।
উল্লেখ্য, টাকার জন্য দেহ আটকে রাখার ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। এই সংক্রান্ত অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ে কমিশনেও। কখনও রোগীর পরিবারকে দায়ী করে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। কখনও বলা হয়, ‘‘বিমা সংস্থা টাকা মেটাতে দেরি করছে।’’ এদিকে জটিলতায় পড়ে হয়রানির শিকার হতে হয় মৃতের পরিবারদের। সম্প্রতি কমিশনে এমনই এক অভিযোগ জমা পড়ে। নিউ আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মুদাসির পারভেজ নামে এক যুবক। তাঁর অভিযোগ, তাঁর পরিবারের লোক গত ১২ আগস্ট রাত ১২টা ৪০মিনিট নাগাদ ওই হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু সময় পেড়িয়ে গেলেও পরিবারকে দেহ হস্তান্তর করা হয়নি। বিমা সংস্থা টাকা মেটাতে দেরি করছে, এই অজুহাতে ১৫ ঘণ্টা ধরে আটকে রাখা হয় দেহ। এই অভিযোগের পরই নড়েচড়ে বসে কমিশন এবং গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর সোমবার তারা নির্দেশিকা জারি করল।
এ প্রসঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। কোনওভাবে বরদাস্ত করা হবে না। সম্প্রতি নিউ আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পাই। তারপরই এই নির্দেশিকা জারি করা হল।”