টনক নড়ুক

টনক নড়ুক

ব্লগ/BLOG
Spread the love


ভারতে অসামরিক বিমান পরিবহণের ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার অন্যতম নজির হয়ে থাকবে আহমেদাবাদের বিপর্যয়। আকাশে ওড়ার মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী উড়ান এআই ১৭১ ড্রিমলাইনারটির ভেঙে পড়া শিহরন জাগায়। চোখের পলকে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে বিমানটি। যাত্রী, পাইলট, ক্রু সহ ২৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যে মেডিকেল কলেজের হস্টেলের ওপর বিমানটি ভেঙে পড়েছিল, সেখানেও অনেকে মারা গিয়েছেন।

মৃতের তালিকায় রয়েছেন গুজরাটের দু’বারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। তবে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বেঁচে গিয়েছেন। তাঁর মতো আরও অনেকের স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিক টাটা গোষ্ঠী, সকলেই নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, আহতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। টাটা গোষ্ঠী নিহতদের পরিবারপিছু ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনায় পড়া মার্কিন বহুজাতিক বোয়িং সংস্থার ড্রিমলাইনার বিমানটিতেই কোনও খামতি ছিল কি না বা প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। পাখির ধাক্কা না ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় এই বিপত্তি, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় নাশকতা যোগ রয়েছে কি না, তারও তদন্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার আশ্বাস দিয়েছে, তদন্তে ত্রুটি থাকবে না।

ভারতে বিমান দুর্ঘটনা আগেও হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বহু বিমান একাধিকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া তখন ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। এখন সংস্থাটি পুরোনো মালিক টাটা গোষ্ঠীর মালিকানায় ফিরে এসেছে। ১৯৩২ সালে জেআরডি টাটার হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল এয়ার ইন্ডিয়া। তখন নাম অন্য ছিল। ২০২২ সালে বিপুল ঋণে জর্জরিত এয়ার ইন্ডিয়াকে কেন্দ্র টাটাদের হাতে তুলে দেওয়ার পর মনে করা হয়েছিল আকাশের ‘মহারাজা’র সুদিন ফিরতে চলেছে।

কিন্তু সংস্থার লোগো এবং বাইরের মোড়ক বদলালেই যে খোলনলচে বদলে যায় না, সেটা এয়ার ইন্ডিয়া বারবার প্রমাণ করেছে। ২০২২ সাল থেকেই সংস্থাটির যাত্রী পরিষেবার মান নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়াকে টাটাদের হাতে দিয়ে লাভ কী হল বলে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁকে চড়া দামে টিকিট কেটে ভাঙাচোরা আসনে বসতে বাধ্য করা হয়েছিল।

আহমেদাবাদে দুর্ঘটনায় পড়া বিমানটি বেশ পুরোনো বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অসামরিক বিমান পরিবহণ ব্যবসায় প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলির সঙ্গে জোর প্রতিযোগিতা থাকলেও অভিযোগের বন্যা এত যে, বাজার এবং সুনাম ধরে রাখা অনেকদিন থেকেই কঠিন হচ্ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষে। সংস্থাটি সরকারি মালিকানাধীন থাকাকালীন বিমানের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের অভিযোগ উঠত।

এখন টাটার মতো নামকরা শিল্পগোষ্ঠীর হাতে গেলেও এয়ার ইন্ডিয়ার দশা দিন-দিন বেহাল হওয়ায় প্রশ্ন ছিল। কোথায় খামতি, বিদেশ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে পেশাদার সিইও ভাড়া করে এনেও কেন সমস্যার নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না, তা-ও বড় প্রশ্ন। পাশাপাশি রহস্য তৈরি হয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ড্রিমলাইনার বিমানটি নিয়েও। রহস্যের কারণ, বোয়িং সংস্থার যে বিমান নিয়ে গোটা বিশ্বেই প্রশ্ন উঠেছে, সেই বিমান বিপুল টাকা খরচ করে এয়ার ইন্ডিয়া চালাচ্ছিল।

দুর্ঘটনার সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়া এবং টাটা গোষ্ঠীর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সন্দেহ তৈরি হওয়া বিরাট ব্যাপার। দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না ঠিকই। কিন্তু সঠিক সময়ে আগাম সুরক্ষা নেওয়া হলে অনেক ক্ষেত্রে বিপন্মুক্ত থাকা সম্ভব। এয়ার ইন্ডিয়ার দুঃস্বপ্নের ড্রিমলাইনারের মরণ উড়ান সেই বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আগামীদিনে আর যাতে এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য অবিলম্বে নড়েচড়ে বসা উচিত কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলির।

The publish টনক নড়ুক appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *