‘ঝুকেগা নেহি’, কাটোয়ার গাজনে এবার পুষ্পারাজ!

‘ঝুকেগা নেহি’, কাটোয়ার গাজনে এবার পুষ্পারাজ!

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


ধীমান রায়, কাটোয়া: ছেলে সুমন্ত মাজি আল্লু অর্জুনের ফ্যান। তাই এবছর বোলানে তাঁকে দেখা যাচ্ছে ‘পুষ্পা’র সাজে। বাবা লক্ষ্মণ মাজি সেজেছেন ‘আইবুড়ো মেয়ে’। গাজন উৎসবে বোলান গানের দলে বাবা ও ছেলে একসঙ্গেই ঘুরে গাজন সন্ন্যাসীদের রাতে জাগিয়ে রাখেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার ন’নগর গ্রামের বোলানশিল্পী লক্ষ্মণ মাজিরা। কাটোয়ার ন’নগর গ্রামের বোলান শিল্পীদলের এলাকায় নামডাক রয়েছে। জানা গিয়েছে, এই বছর ২২ জনের দলটি কাটোয়া, মঙ্গলকোট প্রভৃতি এলাকার মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে গান শোনাচ্ছেন। এই দলের দলপতি লক্ষ্মণ মাজি। তিনি জানিয়েছেন, চার পুরুষ ধরেই তাঁরা বোলানগানের সঙ্গে যুক্ত। লক্ষ্মণ মাজি নিজেই গান রচনা করেন। সঙ সেজে সেই গান গেয়ে শিববন্দনা করেন সহশিল্পীরা। কেউ শিব, কেউ কালী সাজেন। কেউ নন্দী ভিঙ্গি বা ভূতপ্রেত। তবে লক্ষ্মণ মাজির ছেলের সুমন্তর সাজ এবছর একটু ব্যতিক্রমী। বোলান গানের পাশাপাশি তাঁর মুখে শোনা যাচ্ছে পুষ্পা সিনেমার ডায়লগ ‘পুষ্পা নাম সুনকে ফুল সমঝা…।’

সুমন্ত কাজের সূত্রে পরিযায়ী শ্রমিক। হায়দরাবাদে কাজ করেন। গাজনের একমাস আগে বাড়ি চলে আসেন। শুরু হয় রিহার্সাল। কিন্তু এবছর এই ব্যতিক্রমী সাজে কেন? ২৩ বছর বয়সী সুমন্তর কথায়, “এমনিতেই আমি অভিনেতা আল্লু অর্জুনের ফ্যান। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে একটু চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছি।” সুমন্ত জানিয়েছেন পুষ্পা সাজতে তাঁর প্রায় দেড় হাজার টাকার পোশাক কিনতে হয়েছে। গাজনের বোলান গানে বিভিন্নতা রয়েছে। তার মধ্যে একটি শ্মশান বোলান। শিব যেহেতু শ্মশানবাসী। তাই এই শ্মশান বোলানের শিল্পীরা বিভিন্ন দেবদেবীর পাশাপাশি ভূত, পিশাচ,রাক্ষস ইত্যাদি সাজেন। নিয়ম রয়েছে শ্মশান বোলান শিল্পীদের গান শোনার পরে তবেই গাজন সন্ন্যাসীরা জলপান করতে পারবেন। তাই কাটোয়া,দাঁইহাট সহ বিভিন্ন গ্রামে মন্দিরে ঘুরে ঘুরে লক্ষ্মণ মাজির দল সন্ন্যাসীদের গান শোনান। ঢাকের তালে তালে পরিবেশন করা হয় শ্মশান বোলান বা পোড় বোলানের গান। লক্ষ্মণ মাজি পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাপ ঠাকুরদাও বোলান শিল্পী ছিলেন। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকেই বোলান গানের শিক্ষা। এখন তিনি গ্রামের বোলান দলের দলপতি।

স্বাভাবিকভাবেই যত দিন যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন প্রান্তে গাজনের উৎসবে নানা আধুনিক রং লাগছে। সেটা গাজনের গান থেকে শুরু করে সাজপোশাক সর্বত্রই বলা চলে। তবে আধুনিকতার সঙ্গেও উৎসবের রীতি রেওয়াজে রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *