- মহম্মদ গফফার
উত্তর-পূর্ব ভারত নিরাপত্তা বলয়েই রয়েছে। পাকিস্তানের ভিতর ঢুকে ভারতীয় সেনার জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের জেরে উত্তর-পূর্ব ভারতকে নতুন করে অশান্ত করে তুলতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি মদত দিতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। কিন্তু বর্তমান সময় এবং ভবিষ্যতেও তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। মঙ্গলবার মধ্যরাতের এয়ার স্ট্রাইকের কোনও প্রভাবই পড়বে না উত্তর-পূর্ব ভারতে। কারণ, এখন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারত। একই কথা বলা যায়, শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে থাকা চিকেন নেকের ক্ষেত্রেও। চিকেন নেক বা উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও ছাড় দিতে নারাজ ভারত। বরং সময়ের সঙ্গে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও আরও করা হবে। ফলে কোনও ভয় নেই।
তবে এখন সর্বত্রই মঙ্গলবার মধ্যরাতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা চলছে। এটাই স্বাভাবিক। এমন প্রতিশোধের জন্যই তো গোটা দেশ অপেক্ষায় ছিল। ভারতীয় সেনা যেভাবে পহলগাম হত্যাকাণ্ডের জবাব দিয়েছে, তা মধুর বদলা। ২২ এপ্রিল পহলগামে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা যেভাবে নিরীহ পর্যটকদের ওপর হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে খুন করেছিল, তার জবাব দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। ওই হত্যাকাণ্ডকে ধিক্কার জানিয়ে প্রত্যেক দেশবাসী চাইছিলেন প্রতিশোধ। ভারতীয় সেনা যে নিজস্ব কৌশলে পছন্দের সময়ে বদলা নেবে, সেই আত্মবিশ্বাস ছিল। অপেক্ষাটা ছিল শুধু সময়ের। সেই অপেক্ষা শেষ হয় মঙ্গলবার মধ্যরাতে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মিসাইলের এয়ার স্ট্রাইকের আগে তা টের পায়নি পাকিস্তানের কাকপক্ষীও।
মঙ্গলবার মধ্যরাত ১টা ৪ মিনিট থেকে ১টা ৪৪ মিনিট, একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে পহলগাম হত্যাকাণ্ডের মধুর প্রতিশোধ নিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সাধারণ মানুষের বসবাস রয়েছে, এমন এলাকাগুলিকে বাইরে রেখে ভারতীয় সেনা সুনির্দিষ্টভাবে পাকিস্তান এবং পাক অধিগৃহীত কাশ্মীরে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। পহলগাম হত্যাকাণ্ডের পরই ভারত পাকিস্তানে থাকা ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিকে লক্ষ্য করেছিল, জঙ্গিদের এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকেই শুধু গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যেই ঘটেছে এয়ার স্ট্রাইক। যতটুকু জানতে পেরেছি ২৪টি মিসাইলের এয়ার স্ট্রাইকে পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দেওয়া হয়েছে। ভারত ভূখণ্ডে হামলা চালালে তার পরিণতি কী হতে পারে, নতুন করে বুঝতে পেরেছে পাক জঙ্গিরা। ফলে ভবিষ্যতে নাশকতার ক্ষেত্রে জঙ্গিরা যে দু’বার ভাববে, বলা যায়।
(অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, ভারতীয় সেনাবাহিনী)