গ্রুপ ডি কর্মী নেই, নিত্যদিন স্কুলের দরজা খুলছে পড়ুয়া! ক্ষোভ বাড়ছে অভিভাবকদের

গ্রুপ ডি কর্মী নেই, নিত্যদিন স্কুলের দরজা খুলছে পড়ুয়া! ক্ষোভ বাড়ছে অভিভাবকদের

রাজ্য/STATE
Spread the love


মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: ঘড়ির কাঁটা তখন এগারোটা ছুঁয়ে গিয়েছে। গেটের সামনে জড়ো হচ্ছে পড়ুয়ারা। কেউ রোদের মধ্যে দৌড়োদৌড়ি করছে। কেউ বা পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে লাফালাফি করছে। দিদিমণি এবং শিক্ষকদের কয়েকজন স্কুলের পাশের কোনও দোকানে অপেক্ষায় রয়েছেন স্কুল খোলার‌‌। কিন্তু স্কুলের গেটের তালার জন্য কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে স্কুলে এল এক খুদে পড়ুয়া। খুলল গেটের তালা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সকলে। একে একে স্কুলে ঢুকল পড়ুয়ারা। ক্লাস শুরু হতে হতে এগারোটা পাঁচ। একদিন-দু’দিন নয়, রোজই এই দৃশ্য দেখা যায় আমতা দু’নম্বর ব্লকের ভাতেঘড়ি নিউ সেটআপ আপার প্রাইমারি বিদ্যালয়ে। ওই খুদে পড়ুয়া এসে স্কুল না খোলা ইস্তক সকলকে অপেক্ষা করতে হয় বাইরেই। এটাই নাকি এই স্কুলের রোজনামচা। কিন্তু, কেন এক ছাত্রের হাতে স্কুল খোলা-বন্ধের গুরুদায়িত্ব? জানা গেল, স্কুলে কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই। যার জেরেই এই ‘অভিনব’ ব‌্যবস্থা। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে প্রায় কয়েকশো পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রায় সকলেই দূর থেকে আসেন। দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলে নেই কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। স্কুলে দুটি চাবি। একটি চাবি থাকে প্রধান শিক্ষকের কাছে। আরেকটি থাকে ওই পড়ুয়ার কাছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোজই ওই পড়ুয়া স্কুলের তালা খোলে। যেদিন তার আসতে দেরি হয় বা সে না আসতে পারে, সেদিন অন‌্য কারও হাত দিয়ে স্কুলের চাবি পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা থেকে শুরু করে অভিভাবকরাও। তাঁদের বক্তব্য এভাবে চলতে পারে নাকি? অবিলম্বে একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

যদিও প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হয় না। আমাদের বাস-ট্রেনে চেপে আসতে হয়। যেদিন দেরি হয়ে যায় সেদিন ওই পড়ুয়া এসে চাবি খোলে। ছাত্রটিও যেদিন চাবি খোলে সেটাও তাড়াতাড়ি হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যায়। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে? সমস্যার সমাধান কবে হবে? তাছাড়া এক পড়ুয়াকে কি স্কুল খোলার দায়িত্ব দেওয়া যায়? প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না থাকার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু, কাজের কাজ হয়নি। স্থানীয়দের বক্তব্য, বহু স্কুলেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সমস্যা রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা দায়িত্ব নিয়ে স্কুলের গেটের তালা খোলেন। তবে এই স্কুলে কেন পড়ুয়াকে দেওয়া হয়েছে ওই দায়িত্ব? সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি। 

ওই ছাত্রের বক্তব্য, ‘‘আমি প্রতিদিন চাবি খুলি। যখন স্কুলে আসতে না পারি তখন অন্য একজনকে চাবি দিয়ে দিই। সে স্কুল খোলে।’’ আমতা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও পিন্টু ঘরামি বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’ অন্যদিকে হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণকিশোর ঘোষ বলেন, ‘‘অনেক বিদ্যালয়ে গ্রুপ ডি কর্মী নেই। দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলের চাবি খোলেন। ছাত্রছাত্রীরা নয়। এই বিদ্যালয়ে কী হয়েছে সেটা আমি খোঁজ নেব।’’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *