সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: গত চারমাসে তৃতীয়বার। ডায়মন্ড হারবার, কল্যাণীর পর পাথরপ্রতিমা। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ জেরে ফের মৃত্য়ু। এগুলি ছাড়াও বড় কয়েকটি বিস্ফোরণ নাড়িয়ে দিয়েছিল রাজ্যবাসীকে।
২০২৩ সালে মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের খাদিকুলে বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে মারা যান ১২ জন। রেশ কাটতে না কাটতেই বজবজে ফের বিস্ফোরণ। মারা যান ২ জন। একই বছরে আগস্ট মাসের শেষের দিকে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে ভয়াল বিস্ফোরণ প্রাণ কাড়ে ৯ জনের। ২০২৪ সালের শেষের দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ হারান এক বাসিন্দা। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি নদিয়া কল্যাণীতে তীব্র বিস্ফোরণে ঝলসে যান ৫ জন। কেমন আছে এই দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকাগুলির বাসিন্দারা। কী বলছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের নজরদারি কেমন? খোঁজ নিল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
১৬ মে, ২০২৩ পূর্ব মেদিনীপুরের খাদিকুল, মৃত ১২
দুপুর ১২টা। গরমের দুপুর। রোজকার মতোই জীবনযাত্রা চলছিল এগরা ১ নম্বর ব্লকের সাহারা খাদিকুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। হঠাৎ কানফাটানো শব্দ। কেঁপে ওঠে গোটা গ্রাম। বাজি তৈরির বিপুল মশলা মজুত থাকায় বিস্ফোরণ ঘটে। সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায় বাজি কারখানাটি। পাশের একাধিক বাড়িতে আগুন ধরে যায়। ঘটনায় মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়। পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণে শিশু-সহ ৮ জনের মৃত্যুতে সেই দিনের স্মৃতি উঠে আসছে স্থানীয়দের মনে। তবে সেই ভয়াবহ ঘটনার পর গ্রামে আর বোমা তৈরির কারখানায় কথা ভাবতেই পারেন না গ্রামবাসী। চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তাঁরা। বাজি কারখানা বন্ধ হয়ে ভালোই হয়েছে বলে মত তাঁদের। কোথাও বেআইনি কারখানা হয়েছে কি না, তারও খোঁজও নিয়মিত রাখছে পুলিশ।
২১ মে, ২০২৩ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ, মৃত ২
মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধান। মেদিনীপুরের খাদিকুলের পর বাজি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ। মারা যান ২ জন। ২১ মে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের চিংড়িপোতা গ্রামে একটি বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। দোতলায় বিস্ফোরণটি হয়। এছাড়াও বজবজ, মহেশতলা এলাকায় বাজি কারখানা রয়েছে। সেখানেও বিস্ফোরণ ঘটে। আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা। বাড়িতে কারখানা চায় না তাঁরা। অনেকাংশে বাজি কারখানা বন্ধ হলেও, লাইসেন্স প্রাপ্ত কারখানা রয়েছে। পাথরপ্রতিমার ঘটনার পর মহেশতলা পুলিশ মাইকিং করে কারখানার মালিকদের সর্তক করছে।
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ : দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি, মৃত ১
শীতের দুপুর। ঢিমেতালে এগোচ্ছিল কাজ। শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ কেঁপে ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি হাঁড়াল এলাকার একটি বাড়ি। বিস্ফোরণের অভিঘাতে ভেঙে পড়ে দেওয়াল। চুরমার হয়ে যায় গোটা বাড়ি। টিন উড়ে গিয়ে পড়ে পাশের মাঠে। গুরুতর আহত হন মালিক-সহ ৪ জন। পরে হাসপাতালে মারা যান শঙ্করী সর্দার নামে এক মহিলা। সেই ঘটনার পর বসত বাড়ির সঙ্গে বাজি তৈরি বন্ধ। এলাকায় নজরদারি চালায় পুলিশ। বাসিন্দারা চান না প্রাণ কেড়ে নেয়, এমন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকতে।
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫: নদিয়ার কল্যাণী, মৃত ৫
চম্পাহাটির বিস্ফোরণ রেশ কাটেনে তখনও। শীতের দুপুর গড়িয়ে বিকেল নাগাদ কল্যাণী থানার অন্তর্গত রথতলায় বাজির কারখানায় বিস্ফোরণের পর মৃত্যু হয়েছিল পাঁচজনের। এই ঘটনার পরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নজরদারি বাড়ানো হয় ওই এলাকায়। ঘটনার পর থেকে শুনশান হয়ে পড়ে এলাকা। এখনও যেন সেই আতঙ্ক গ্রাস করছে এলাকার মানুষকে। এলাকায় নতুন করে বাজি কারখানা তৈরি হোক চান না স্থানীয়রা।
একের পর এক বিস্ফোরণে প্রাণহানী ঘটে। তারপরও বন্ধ হয় না অবৈধ বাজি কারখানা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার কড়া বার্তা দিয়েছেন। তারপরও এই কাণ্ড। পাথরপ্রতিমার ঘটনা সেই তালিকায় আরও একটি নাম যুক্ত করল।