খাঁটি হিন্দুত্ব লেবেল দেখে চিনবেন

খাঁটি হিন্দুত্ব লেবেল দেখে চিনবেন

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


 

ছবি ও সই দেখিয়া কিনিবেন। কিনিবার সময় বোতলে হলোগ্রাম দেখিবেন। কোনও এক তালমিছরির কোম্পানি নকল থেকে বাঁচতে এমন সব সতর্কতা লেখা বিজ্ঞাপন দিত। ক্রেতারা সতর্ক হতেন। বাজারের একই নামের প্রোডাক্টের নকল, ভেজাল ঠেকাতে এমন বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখা যেত এবং যায়। সে না হয় হল। তা বলে ভেজাল আর মিথ্যে হিন্দুত্ব! একদল বলছে ওদের হিন্দুত্ব আগাগোড়া ভেজাল, অন্য দল বলছে আমাদের হিন্দুত্ব শেখাতে এসো না। আমরা খাঁটি আরএসএসের লোক। অরিজিনাল সনাতনী,  নাগপুরের প্রোডাক্ট। কত রকমের হিন্দুত্ব বাজারে রয়েছে কে জানে।

রাজনীতিতে হিন্দুত্বের একমাত্র ঠিকাদার বলে দাবি করা বিজেপির যে নানারকম ভেজাল আর নকল বেরিয়েছে তা কে জানত? দিঘায় জগন্নাথের মন্দিরে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ না গেলে জানাই যেত না। কে আসল হিন্দু তা নিয়ে বিজেপিতেই গৃহযুদ্ধ বেধেছে। একদল আরেক দলকে ভেজাল বলে গাল পাড়ছেন। পিছনে চলে গিয়েছে ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই।’ আরেক দল সনাতনীদের জড়ো করে জগন্নাথ যাত্রার পালটা দিচ্ছে। তাদের হিন্দুত্বই খাঁটি বলে তাল ঠুকছে সমান তালে। ভাবুন তো ব্যাপারটা! রীতিমতো খোলকত্তাল বাজিয়ে মঞ্চ তৈরি করে সনাতনীদের একজোট করার ডাক দিচ্ছে এক পক্ষ, অন্য পক্ষ বলছে ওদের কথায় কান দেবেন না ওরা ভেজাল।

দিলীপ ঘোষ আর শুভেন্দু অধিকারীর লড়াইটা খুব গোপন কিছু নয়। দুজনে বলতে গেলে সাপে নেউলে। এবারের লোকসভা ভোটের সময় যা একেবারে বেআব্রু হয়ে পড়েছিল। মেদিনীপুরের জেতা আসন ছেড়ে দিলীপবাবুকে পাঠানো হয়েছিল দুর্গাপুরে। সে জায়গায় মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে ডাহা হেরেছিলেন অগ্নিমিত্রা পল। কার কলকাঠিতে দিলীপবাবুকে নিজের কেন্দ্র ছেড়ে অন্য জেলায় পাড়ি দিতে হয়েছিল কে না জানে! ক্রমে আমরা দেখলাম তাঁকে একেবারে এলেবেলে করে দেওয়া হল। তিনি এখন কিছুই নন। দলে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ নেই তাঁর। ফলে তাঁর অনুগামীদের ক্ষোভ হওয়াটা স্বাভাবিক। তাঁদের কথা, যাঁর হাত ধরে এ রাজ্যে বিজেপি তিন থেকে সাতাত্তর হল তাঁর এমন হেনস্তা কেন? তাঁর জায়গায় যিনি এসেছেন, তাঁর সময়ে বিজেপি ক্রমেই তলানিতে। সাতাত্তর এমএলএ কমে পঁয়ষট্টি হয়েছে। বিজেপির ভোটের হারও কমছে পাল্লা দিয়ে।

একটা দলে থেকে নিজেদের মধ্যে এহেন ঝগড়াঝাঁটি বেশ অভিনব। বিশেষ করে, যে দল দাবি করে তারা ‘পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স।’ তারা অন্যরকম। সুশৃঙ্খল, অনুশাসনে বাঁধা। সেই দলে দিলীপপন্থী বনাম শুভেন্দুপন্থীদের হাতাহাতিও দেখলাম আমরা। এরপর কী হবে কে জানে। দিঘায় মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দিলীপবাবুর জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়াটা একটা উপলক্ষ্য। গোলমালটা পাকাচ্ছিল অনেকদিন থেকেই। নইলে আমন্ত্রণের চিঠি তো পেয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার, মায় শুভেন্দুও। রাম মন্দিরের উদ্বোধনের চিঠি পেয়েও মমতা যাননি কেন তা নিয়ে কম জলঘোলা করেনি বিজেপি। এখন দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন এই সেদিনও যাঁরা তৃণমূলে ছিলেন তাঁরা। সেই তাঁরা বহুদিন আরএসএস করা দিলীপবাবুকে হিন্দুত্ব আর বিজেপির অনুশাসন নিয়ে নানারকম কথা শোনাচ্ছেন। মজা মন্দ নয়। সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিলীপের কাজ দল অনুমোদন করে না বলে একবার জানিয়ে তারপর নীরব। পার্টির অনুমোদিত নয় এমন কাজ করার জন্য তাঁর পূর্বসূরির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে স্পিকটি নট তিনি। অদ্যাবধি কোনও মন্তব্য করেনি পার্টির দিল্লির হাইকমান্ড।

বরং এখন অর্জুন, সৌমিত্রর সঙ্গে লড়াইয়ে দিলীপ বলছেন, ‘আমি সবাইকে ন্যাংটো করে দিয়ে যাব।’ এই করতে গিয়ে নিজের পার্টিটাকেই নগ্ন করে দিচ্ছেন তিনি। একুশের পর দলে আসা হঠাৎ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ এখন খোলাখুলি, সবার সামনে। কে কোন কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেন, কে ঘনঘন বিছানা বদলান সবই সবাই জানতে পারছে। খুব তাড়াতাড়ি এ তাল ঠোকাঠুকি থামবে এমন কোনও লক্ষণ নেই। মুখ আলগা দিলীপবাবুকে কে সামলাতে পারবে তা জানা নেই। যেটা জানা আছে তা হল বিধানসভার ভোটের আগে প্রধান বিরোধী দলটায় ভাগাভাগি এখন চরমে। তা বাড়বে বই কমবে না। হিন্দুত্ব নিয়ে সেই আগ্রাসী লাফালাফি কিছুটা যে থমকে যাবে তাও বলা যায়। কে খাঁটি আর কে ভেজাল সনাতনী, কে আদি আর কে তৃণমূলের উচ্ছিষ্টভোজী তা নিয়ে চাপানউতোর এখন ঠেকেছে ব্যক্তিগত কুৎসায়। সেটা আরও বিপদের কারণ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *