নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: একদিকে বৃহস্পতিবারই দেশে ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, একই দিনে সিবিআই-র ডিরেক্টর থেকে শুরু করে এনআইএ-র ডিজি-র সামনে সাইবার অপরাধ নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মালা রায়।
সূত্রের খবর, মমতার সুরেই দেশের প্রথম সারির তদন্ত সংস্থার প্রধানদের কাছে ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ নিয়ে দলমত নির্বিশেষে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংসদের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটি। এদিন কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন দলের সাংসদরা সিবিআই-র ডিরেক্টর, এনআইএ-র ডিজি এবং সাইবার অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সামনেই সাইবার অপরাধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সূত্রের দাবি, বৈঠকে কমিটির সদস্য তথা লোকসভার সাংসদ মালা রায় সাইবার অপরাধ প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশে যেভাবে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বহু মানুষ সর্বস্ব খুইয়ে ফেলছে।
এদিকে এদিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কে সাইবার অপরাধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা যাচ্ছে, সেই সুরেই এদিন কমিটির বৈঠকে রীতিমতো পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মালা। জানান ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে ডিজিটাল অ্যারেস্ট ২১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। প্রায় দু’হাজার কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। এর খেসারত কে দেবে বলে তৃণমূল সাংসদ প্রশ্ন তুলেছেন বলেই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে মার্চের মধ্যেই ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হয়ে ২১০ কোটি টাকা খুইয়েছে সাধারণ মানুষ। বহু ঘটনায় অপরাধও নথিভুক্ত হচ্ছে না বলেও এদিন অভিযোগে মুখর হয়েছেন মালা। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কেন জনস্বার্থে প্রচারিত বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তৈরি করা হচ্ছে না তাও জানতে চান তিনি।
সূত্রের খবর, একাধিক বিরোধী সাংসদ এই ধরনের মামলায় কম সংখ্যক সাজাপ্রাপ্তির অভিযোগ তুলে ধরেন। এবং হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের ভারতীয় সংস্থাগুলির বিদেশি আশ্রয় থেকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও উত্থাপন করেন। এদিনের বৈঠকে তদন্ত সংস্থাগুলি তাদের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরলেও তাতে বিরোধীরা সন্তুষ্ট হননি বলেও সূত্রের দাবি। আরও জোরালো পদক্ষেপের প্রয়োজনের রয়েছে বলে সওয়াল করে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
বিজেপি সাংসদ রাধামোহন দাস আগরওয়ালের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বুধবার এবং বৃহস্পতিবার ‘সাইবার অপরাধ- প্রভাব, সুরক্ষা এবং প্রতিরোধ’ নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করে। প্যানেলের সামনে আর্থিক পরিষেবা বিভাগ, ব্যাঙ্ক, টেলি যোগাযোগ বিভাগ, ভারতের টেলিকম নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক, বিদেশ বিষয়ক, কর্পোরেট বিষয়ক এবং ভারতের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।