বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রাজধানী রাজ্যের ক্ষমতা দখলের ভোট। দিল্লির কুর্সি কার দখলে থাকবে সেদিকে নজর রয়েছে গোটা দেশের। এবার লড়াই ত্রিমুখী হলেও ফের ক্ষমতায় ফিরে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি হ্যাটট্রিক করতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বুথফেরত সমীক্ষা হিসেব উলটে দিয়ে ২৭ বছর পর দিল্লির মসনদ গেরুয়া শিবিরের দখলে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সব হিসেব উলটে দেওয়ার পিছনে বাজেটে আয়কর ছাড়ের ঘোষণা কেজরিওয়ালের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বেশির ভাগ সমীক্ষা সংস্থাই বিজেপিকে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এগিয়ে রেখেছে। তবে বুথফেরত সমীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মেলে না। অতীতে এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। সাম্প্রতিককালে গত লোকসভায় বিজেপি একাই সাড়ে তিনশোর বেশি আসন পেতে পারে বলে বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এলেও বাস্তবে তার সঙ্গে ফারাক ছিল আকাশজমিন। বিজেপি ২৫০ পার করতে পারেনি।
অন্যদিকে, বুধবার ছিল দিল্লির ভোটগ্রহণ। বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দিল্লি বিধানসভার ভোট নিয়ে প্রথম থেকেই সরগরম ছিল রাজধানী। সব থেকে বেশি শোরগোল ফেলেছিল বাংলাদেশি ও যমুনার জল দূষণ। কার্যত বাকবিতণ্ডায় জড়ায় তিন শিবিরই। নির্বাচন কমিশনকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়। কিন্তু ভোটপ্রচারের শুরু থেকেই কেজরিওয়ালের একের পর জনমুখী প্রকল্প ঘোষণায় চাপে পড়ে যায় বিজেপি ও কংগ্রেস। তিন-তিনবার ইস্তেহার প্রকাশ করতে হয় গেরুয়া শিবিরকে। এক সময়ে যে অনুদান রাজনীতিকে কটাক্ষ করতেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহরা তাঁরাও অনুদান ঘোষণা করতে থাকেন। অন্যদিকে গতবার আসনের ভাঁড়ার শূন্য থাকলেও এবার খাতা খুলতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কংগ্রেস। কিন্তু বুধবার ভোটগ্রহণ পর্ব মিটতেই বিভিন্ন সমীক্ষক সংস্থার তরফে বুথফেরত সমীক্ষার যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে তাতে উল্লসিত গেরুয়া শিবির। সমীক্ষা সংস্থা চাণক্য জানাচ্ছে, ৭০ আসন বিশিষ্ট দিল্লির কুর্সি দখল করতে চলেছে বিজেপি। ধরাশায়ী হবে আপ ও কংগ্রেস।
চাণক্যর হিসেব, বিজেপি পেতে পারে ৩৯ থেকে ৪৫ আসন। আপ পেতে পারে ২৫ থেকে ২৮টি আসন। কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে খুব বেশি হলে দু’টি আসন। মার্টিজের সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি পেতে পারে ৩৫ থেকে ৪০ আসন। সেখানে আপের ঝুলিতে আসতে পারে ৩২-৩৭ আসন। সমীক্ষা সংস্থা পি মার্কের সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি পেতে পারে ৩৯ থেকে ৪৯ আসন। আর আপ পেতে পারে ২১ থেকে ৩১টি আসন। পিপলস পালসের সমীক্ষায় বিজেপিকে ৫১ থেকে ৬০টি আসন আর আপকে ১০ থেকে ১৯ আসন দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস একটিও আসন পাবে না বলে জানানো হয়েছে। পি মার্কের সমীক্ষাতেও বিজেপি সরকার গঠন করতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে ৩৯-৪৯ আসন। সেখানে আপ পেতে পারে ২১ থেকে ৩১টি আসন।
যদি একান্তই সমীক্ষার ফল বাস্তবের সঙ্গে মিলে যায় তাহলে কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্তকে আয়কর ছাড়ের ঘোষণা বিজেপিকে সাহায্য করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারিরা। কারণ, কেজরিওয়ালের ভোটব্যাঙ্ক মূলত গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। আয়কর ছাড় দিয়ে মোদি-শাহরা কেজরির মধ্যবিত্তের ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসিয়েছে। অন্যদিকে, হরিয়ানায় ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা করে দেয় আপ। পরাজয় হয় কংগ্রেসের। দিল্লির ক্ষেত্রে ঠিক উলটো। যদি কংগ্রেস ভোট বাড়াতে সক্ষম হয় তাহলে প্রমাণিত হবে হরিয়ানার সুমধুর প্রতিশোধ রাজধানীতে নিয়েছে কংগ্রেস। আপের ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে সফল হয়েছে হাত শিবির!