- সুমন্ত বাগচী
১
ঘোর হয়ে আসা বিকেলে বাসের জানলার পাশে বসে ফুরিয়ে আসা দিন দু’চোখ ভরে দেখা সুবীরের বহুদিনের অভ্যাস। এই সময় মনে একধরনের উদ্বেগহীন প্রশান্তি ছড়িয়ে থাকে; যেন আজকের মতো শেষ হল। সামনে ছুটি থাকলে আরও ভালো লাগে।
সুবীর সরকার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি জাতীয় সড়কের একেবারে ধার ঘেঁষে শিলিগুড়ি থেকে বাইশ কিলোমিটার দূরত্বে এই স্কুল। প্রতিদিন যাতায়াত মিলিয়ে পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটারের বেশি বাস জার্নি করতে হয়। আগে বাসে বসার জায়গা পেতে অসুবিধা হত না। গত কয়েক বছর এই রুটে প্রাইভেট বাস অনেক কমে গিয়েছে। সরকারি বিশাল নীলরঙের বাসই যাত্রীদের প্রথম পছন্দ। এদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় প্রাইভেট বাস এঁটে উঠতে পারছে না। সাধারণত উলটোটাই ঘটে। এই নীলরঙের সরকারি বাসগুলো অনেক আধুনিক। সময় মেনে চলে। যেখানে-সেখানে দাঁড়ায় না। বসার ব্যবস্থাও বেশ আরামদায়ক।
অনেকে আবার এদের ‘হাঙর’ বলে। সমস্ত যাত্রীদের গিলে নেয় কিনা! প্রতি দশ মিনিটে এই বাস পাওয়া যায়। কখনো-কখনো আরও আগে চলে আসে। সব মিলিয়ে বসার জায়গা পাওয়া দিন-দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার সময় খুব কমই পাওয়া যায়। ফেরার সময় ভিড় দেখে দু’-একটি বাস ছেড়ে দেওয়া যায়। বাড়িতে তো আর লেট অ্যাটেনড্যান্সের ব্যাপার নেই!
সুবীরের আর বছর পাঁচেক চাকরি আছে। সুবীরের বাবা বাংলাদেশ থেকে দেশভাগের পর এসে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরির পর শিলিগুড়িতে থিতু হন। তাঁদের বৃহৎ পরিবারের বেশিরভাগই শিলিগুড়িতে পাকাপাকিভাবে থাকে। স্বাধীনতার আগে থেকেই এই পরিবারের বামপন্থার প্রতি ঝোঁক। দেশভাগের দুর্দশা, অনিশ্চয়তা সামলে উঠে বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সমর্থক থেকে সদস্যে পরিণত হন অনেকেই। শিলিগুড়িতে যে কয়েকটি পরিবারকে কেন্দ্র করে বামপন্থী আন্দোলন তৈরি হয়েছিল, ‘সরকার পরিবার’ তাঁদের অন্যতম।
সুবীর যখন কলেজের ছাত্র, সেটা আশির দশকের শেষ দিক। পরপর তিনটে নির্বাচনি লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে বিরোধীশক্তি হতোদ্যম। গ্রামগঞ্জে যারা এতদিন বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তাদের মনেও প্রশ্ন তৈরি হতে শুরু করেছে– এইভাবে আর কতদিন আর বিরোধিতা করা যায়? বয়স্ক আর তরুণদের বেঁচে থাকার ভঙ্গি কখনও এক হতে পারে না। তরুণদের সামনে প্রায় পুরো জীবন পড়ে আছে। তাঁদের একটা বড় অংশ রাজ্যের ক্ষমতাসীন বামপন্থী দলের দিকে আসতে শুরু করে।
বাড়িতে রাজনৈতিক পরিবেশ থাকায় ছাত্র আন্দোলন এবং পরে যুব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পার্টির সদস্য পদ পেতে সুবীরের স্বাভাবিকভাবেই খুব দেরি হয়নি। ছাত্র হিসাবে সুবীর বরাবরই মনোযোগী ছিলেন। সুবীরের বাবা সমীরণবাবু স্থানীয় একটি স্কুলে বাংলা পড়াতেন। এলাকায় প্রাক্তন নকশাল হিসাবে পরিচিত ছিলেন। যদিও জেল খাটেননি বা আত্মগোপন করতে হয়নি। সাতাত্তরে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর জেলবন্দি নকশালদের অনেকেই মুক্তি পায়। জেলে থাকাকালীন সামনে লক্ষ্য ছিল, কবে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর সবই অনিশ্চিত। রোজগার নেই। অনেকের থাকার জায়গার অভাব। সবচেয়ে বড় কথা, যে আদর্শের টানে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই আদর্শ এখন বহু প্রশ্নের মুখে।
এক-একদিন সদ্য জেল থেকে মুক্তি পাওয়া সহযোদ্ধাদের কেউ কেউ সমীরণবাবুর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন; সারাদিন থাকতেন। তারপর যাওয়ার আগে অর্থসাহায্য নিয়ে চলে যেতেন। সেই সময় সমীরণবাবুকে ভীষণ অসহায়, অপরাধী দেখাত। হয়তো তিনি ভাবতেন সমাজ পালটানোর ইচ্ছে বুকে নিয়ে এঁরা যে ঝুঁকি নিলেন, তার ফলে এঁদের যে অবস্থা হয়েছে তার তুলনায় তিনি যে অনেক ভালো আছেন, সেটা এক ধরনের অপরাধ।
সমীরণবাবুর সহকর্মী ছিলেন সুধাময় ভাদুড়ি। অঙ্কের শিক্ষক। বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ছিল, আর ছিল চমৎকার রসবোধ। প্রাইভেট টিউটর হিসাবেও নাম ছিল। কোনও ছাত্রী মাধ্যমিক পাশ করতে পারছে না বলে তাঁর বিয়ের সম্বন্ধে ব্যাঘাত ঘটছে– ভাদুড়িবাবু তাঁদের জন্য অঙ্কে ‘ম্যারেজ কোর্সের’ ব্যবস্থা করতেন। একটি সম্পাদ্য, দুটো সমাধান, দুটো গ্রাফ, তার সঙ্গে গোটাদুয়েক অবজেক্টিভ প্রশ্নের জন্য তাঁদের তৈরি করে দিতেন। সেই তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘বুঝলেন, বিপ্লব-টিপ্লব আর হবে না, তবে বিপ্লবের কথা বলে যেতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মগ্ন হওয়ার ফলে একাধিক চাকরির সুযোগ সুবীরের সামনে এলেও সবদিক ভেবে শিক্ষকতার চাকরিতেই যোগদান করেন। নিয়ম মেনে এরপর সংসার জীবনে প্রবেশ।
২
‘জলপাই মোড়, জলপাই মোড়’ বাস কনডাক্টরের চিৎকার শুনে সংবিৎ ফিরল সুবীরের। প্রায় বছর পনেরো আগের সময় থেকে আজকের সময়ে আছড়ে পড়লেন। সায়কের কি আজ প্রাইভেট টিউশন আছে? সায়ক ক্লাস টেনে পড়ে। সামনের বছর বোর্ড এগজাম দেবে। মেয়ে অন্বেষা বড়। ডাক্তারি পাশ করে ইন্টার্নশিপ করছে। দীর্ঘদিন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সুবীর বুঝতে পারেন যে সাধারণ ছেলেমেয়েদের তুলনায় তাঁর ছেলেমেয়ে দুজনেই যথেষ্ট মেধাবী। মেয়ের মতো ছেলেকেও টিউশনে পৌঁছে দিয়ে আসতে হয়। এক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে সমান সমান।
স্কুটার বাড়ির সামনে আসতেই পিঠে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষারত সায়ককে নজরে পড়ল। অনেক লম্বা হয়ে গিয়েছে। হওয়ারই কথা। সুবীর নিজেও যথেষ্ট লম্বা। মুখে-চোখে বিরক্তি নিয়ে সায়ক বাবাকে প্রশ্ন করল, ‘আজকেও পার্টি অফিসে গিয়েছিলে নাকি? আর একটু হলেই মাকে টিউশনে দিতে যেতে হত।’ স্কুল থেকে ফেরার পথে পার্টি অফিসে একবার ঢুঁ মারা বহুদিনের অভ্যাস। পরপর তিনটি নির্বাচনে সুবীরদের দল পরাজিত হয়েছে। শুধু পরাজিত নয়, শেষ নির্বাচনে পার্টি একটি আসনও জিততে পারেনি; স্বাধীনতার পর এই রকম ফলাফল আগে কখনও হয়নি। সায়ককে টিউশনে পৌঁছে দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই পার্টি অফিস থেকে ফোন। আজ সাড়ে ছ’টায় জরুরি মিটিং আছে। সাড়ে ছ’টা নাগাদ সায়কের টিউশন শেষ হয়।
যে পার্টি অফিস একসময় গমগম করত, এখন সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া তেমন কেউ আসে না। পুরোনো নেতাদের অনেকে আর জীবিত নেই। কেউ কেউ আবার বয়সের কারণে পার্টির পদে আর নেই। এই মুহূর্তে একটা ঢিলেঢালা ভাব।
সুবীরদের সমসাময়িক যাঁরা পার্টিতে ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আর পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। কয়েকজন আবার দল বদল করে নিয়েছেন। অল্প কয়েকজন থেকে গেলেও, তাঁদের সক্রিয়তা অনেক কমে গিয়েছে। যাঁরা এখনও রয়ে গেলেন, তাঁদের রয়ে যাওয়ার কারণ কি শুধুই আদর্শগত টান নাকি অন্য কিছু? দীর্ঘদিনের অভ্যাস? নতুনভাবে কিছু করার বা নতুন দলে যোগ দেওয়ার জন্য যে উদ্যম প্রয়োজন, সেই উদ্যমের অভাব?
দিনকয়েক আগে সামাজিক মাধ্যমে এক জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতার উত্তর সুবীরের ভালো লেগেছিল। সত্তর বছর বয়সি এই অভিনেতাকে এক তরুণী প্রশ্ন করেন, ‘আপনি এই বয়সে নতুন করে প্রেম করতে রাজি?’
অভিনেতা উত্তরে বলেন, ‘এই বয়সে প্রেম করতে হলে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হবে, সেই উদ্যম আর নেই।’
দীর্ঘদিন পার্টির পরিমণ্ডলে থাকার ফলে, বিপদে-আপদে পার্টির লোকদের কথাই সবার আগে মনে হয়। এরিয়া কমিটির সম্পাদককে ফোন করে জানাতে হল, ‘গৌরব, ছেলেকে টিউশন থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তারপর যাব। একটু দেরি হবে।’ ফোনের ওপ্রান্ত থেকে জবাব এল, ‘ঠিক আছে শুরু করতে করতে সাতটা বাজবে। তুমি এসো।’ এরিয়া কমিটির সম্পাদকের বয়স চল্লিশের আশপাশে। আর্থিকভাবে সচ্ছল। পার্টির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করে, কিন্তু সময়টা এখন বদলে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বামপন্থার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই।
মিটিং শুরু হতে হতে সাতটা পেরিয়ে গেল। মূল বক্তব্য, দু’-চারদিনের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। তাই এখন থেকেই পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। এখন কোনও নির্বাচন সামনে এলেই গায়ে জ্বর আসে। সমর্থকদের কথা তো বাদই দেওয়া গেল, পার্টি সদস্যদের একটা বড় অংশকে নামানোই যায় না। কিছু কাজ তো করতেই হয়। একটা নির্বাচনি অফিস খুলতে হয়, ভোটার লিস্ট স্ক্রুটিনি করা, বাড়ি বাড়ি ভোটার স্লিপ পৌঁছানো। তারপর আবার ভোটের দিন পোলিং এজেন্ট জোগাড় করা বড় ঝামেলার কাজ। একসময় পোলিং এজেন্ট কে হবে তাই নিয়ে মন কষাকষি শুরু হয়ে যেত। এখন খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের অভাব; এইসব কাজে বয়স্করাই ভরসা।
সুবীরদের দল যেহেতু নির্বাচনি জয়-পরাজয়ে প্রায় বাইরে চলে গিয়েছে, তাই মানসিক চাপ কিছুটা কম। আগে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলেই চারদিকে একটা সাজোসাজো রব পড়ে যেত। কর্মী-সমর্থক নিয়ে পাড়ার নির্বাচনি অফিস গমগম করত। একটু রাত হলে যখন পার্টি অফিস ফাঁকা হয়ে যেত, তখন জেলার নেতারা আসতেন। কাজকর্মের খোঁজখবর নিতেন, কখনও মৃদু শাসন করতেন। এখনও আসেন তবে কেবল উৎসাহ দিতে। পরিস্থিতি না বুঝলে কি আর নেতা হওয়া যায়?
৩
ভোটের আগের দিন বহু কষ্ট করে পোলিং এজেন্ট জোগাড় করা গেল। কোনও বুথ ফাঁকা গেল না। টিফিনের ব্যবস্থা হয়ে গেল। সুবীরের মেয়ে এবার প্রথমবার সাধারণ নির্বাচনে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবে।
সুবীর মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন, ‘অনু, কাল কখন ভোট দিতে যাবি?’
মেয়ের দায়সারা উত্তর, ‘আমি ঠিক চলে যাব। তুমি ভেবো না।’
-‘চাইলে আমি তোকে নিয়ে যেতে পারি।’
-‘না বাবা, আমি আমার মতো চলে যাব।’
এবার সুবীর আসল কথাটা পাড়লেন– ‘আমাদের দলের ক্যান্ডিডেটের কত নম্বরে নাম জানিস তো?’
অনুর গম্ভীর মুখের প্রতিক্রিয়া, ‘বাবা, আমি আমার পছন্দমতো ভোট দেব।’
সুবীর থমকে গেলেন। বুঝলেন, দেরি হয়ে গিয়েছে। মাটি আর নরম নেই। এখন জোর করলে হিতে-বিপরীত হবে। মনের মধ্যে একটা তিক্ত ভাব ছড়িয়ে পড়ছে।
এই পরিস্থিতির জন্য তিনি নিজেই কি দায়ী নন? ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রথাগত শিক্ষার দিকে যত নজর দিয়েছেন, তাঁদের মানসিক গঠনের দিকে তত নজর ছিল না। সুবীরের বাবা সমীরণবাবু বাড়িতে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কত রকম আলোচনা করতেন। তখন সুবীররা সবাই স্কুলে পড়ছে। তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, সত্যজিৎ থেকে শুরু করে চুনী গোস্বামী, চারু মজুমদার– কেউ বাদ যেতেন না। সুবীর যে আজ কট্টর মোহনবাগান সমর্থক, তার একটাই কারণ, কৈশোরের সেই স্বপ্নময় দিনগুলোতে বাবার কাছে চুনী গোস্বামীর গল্প শোনা।
বাইরে পার্টি কমরেড তনয় ডাকছে। আর সময় নষ্ট করা যাবে না। তিনটি পার্টির বুথই কাছাকাছি। সবাই চেনা। শিলিগুড়ি শহরের রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার সুনাম আছে। এখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা খুব কম ঘটে।
ভোট প্রায় শেষের দিকে। সুবীরদের বুথে সারাদিন খুব কম ভোটার এসেছে। গল্পগুজব করেই সময় কেটে গেল; নির্বাচন এখন উৎসব। ভোট শেষ হওয়ার মিনিট পনেরো আগে এক বছর চল্লিশের তরুণ সংকুচিতভাবে সুবীরদের টেবিলের সামনে এসে ভোটার স্লিপ চাইল। নাম বলল, আবির বসু। বুথ জিজ্ঞেস করাতে জানাল- সে অনেকদিন শিলিগুড়ির বাইরে থাকে। শুধু ভোট দেওয়ার জন্য এসেছে। চেহারায় আর্থিক সচ্ছলতার ছাপ নেই। বাবার নাম জিজ্ঞেস করাতে আবির বলল, ‘হিমাদ্রি বসু।’
সুবীরের কানে নামটা যেতেই তিনি চমকে উঠলেন। আবির হিমাদ্রিবাবুর ছেলে? হিমাদ্রিবাবু সুবীরদের পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। শিক্ষকতা করতেন। দুই ছেলে ছিল। কেউই সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। বড় ছেলেটি পড়াশোনা শেষ করার আগেই বিয়ে করে বসে। কোনও রোজগার নেই। বিয়ে ভেঙে যায়। অনেকে বলে এইসব কারণেই হিমাদ্রিবাবু মারা যান, নাহলে আরও কিছুদিন বাঁচার কথা ছিল।
সুবীরের প্রশ্নের উত্তরে আবির জানাল, সে হিমাদ্রিবাবুর বড় ছেলে। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। অল্প বেতন। কষ্টের মধ্যে দিন কাটে। কিন্তু প্রত্যেকবার তাঁর বাবার প্রিয় দলকে ভোট দিতে শিলিগুড়ি আসা চাই-ই চাই।
পশ্চিম দিকে ঢলে পড়া সূর্যের আলোয় আবিরকে অন্যরকম দেখাচ্ছে। তাঁর চেহারার খুঁটিনাটি মিলিয়ে গিয়ে একটা সিল্যুয়েট স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই মুহূর্তে সুবীরের মনে বলছে– হিমাদ্রি বসুর পুত্র আবির বসু, এই পরিচয় মুছে গিয়ে হয়ে উঠছেন অসংখ্য নাম না জানা পার্টি কমরেডদের সন্তানদের প্রতিনিধি। তীক্ষ্ণ অস্ত্র একে যেন ছিন্ন করতে পারবে না, সর্বগ্রাসী অগ্নিদগ্ধ করতে অক্ষম। সকালে মনের মধ্যে যে তিক্ততার জন্ম হয়েছিল, তা এই মুহূর্তে একদম নেই। ডাক্তার মেয়ের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ মেলেনি; তিনি পারেননি কিন্তু কোথাও না কোথাও হিমাদ্রিবাবুর মতো মানুষেরা রেখে গিয়েছেন আবিরদের।