১
মিরুজেন নদীর তীরে
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া
নিশাত খড়্গের মতন দেখায় তোমাকে
শান্ত ও আনমনা ঘুমিয়ে পড়েছ
কোন মিথের ওপরে
চাঁদের গায়ে হালকা মোম লেগে আছে
মধু আর মোম হাতে
ফেরার কথা তিসি খেতের দেশে
বিভোর রয়েছে তাও অন্ধকার সাঁকো
ডুবে গেছে শুক্ল তিথিরেশে
যাবে বলেই তো ব্রিজ বানায় মানুষ
আপ্রাণ ঘণ্টি বাজায় এই কলকাতা শহর
খুব তাড়া থাকে যেন তারার তিমির থেকে
শেষ ট্রামে ফেরার তোড়জোড়
শুধু মিরুজেন নদীর তীরে ফিরেও দেখোনি
পড়ে আছে ক্ষয়ে আসা আলো
মরা নক্ষত্রের হাড়গোড়…
২
দু’হাজার পঁচিশ
অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
পড়েছি ফ্যান্টাসি, দুয়োরানীর হাসি, হ্যামেলিনের বাঁশি… সম্মোহন
অনেক ঠেকে-ঠেকে গিয়েছে চোখ পেকে, ব্রেইলে বই লেখে অন্ধজন
বাইরে ছায়া গাঢ়, যতটা জোরে পারো আছড়ে মারো, ভাঙো এ-সাইলেন্স-
রসুইঘরে রোজ রাঁধছি ভূরিভোজ- বাড়িয়ে দিয়ে ডোজ মেশাই দ্বেষ-
ফলত প্রয়োজনে খাদ্য-পয়জনে ছ্যাতলা-ধরা মনে পচননীল…
কোথাও ‘লিপ লক’ কোথাও বিপ্লব, ঘড়ির টিকটক… বচনশীল…
সময় সঙ্গিন, রূপকথার মীন ভাসছে প্রাণহীন পুকুরময়…
স্টিমার ছেড়ে চলে কমতে-থাকা জলে… বন্ধ-চটকলে দুপুর হয়…
বেকার রেঁধে খায় ট্রেকার বেগে ধায় পেপার ছেপে যায় ‘রেপ ও খুন’
ভাঙছে পাকা বিয়ে, ডালডা মেশে গিয়ে, হিসেব কষে নিয়ে স্টেপ ফেলুন!
৩
গল্প
সুবীর সরকার
এই শহরের মাঝখানে, এই গোলশহরের ভূগোলে
বিপুল অন্ধত্ব নিয়ে হেঁটে যাই
মুঠোয় মেঘ।
আকাশের মায়ায় ভোজসভার টেবিল।
গিটার বাজানো রাতে জমে ওঠে
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের গল্প।
আলো কমে আসে। আর শহরজুড়ে সাইরেন।
৪
ঋষভের প্রেম হেতু
প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়
অথচ নিপুণ ছিল চর্চাগত শব্দ তাঁর রাগের আলাপ
আমার বুকের মধ্যে হেরে থাকা চাঁদ অংশ সমস্যা জর্জর
অতিকায় চক্রবর্তী রাজাজ্ঞা দাসানুদাসে পাতার নিষ্পাপ
নভস্বান বেগে ক্ষিপ্ত দুনিয়াদারির নেশা পেশায় নির্ভর!
অচ্যুতবিলাসী বর্ণে সাজসজ্জাকারীদের এই যে কথন
বোধের অগম্য বলে ফেলেছে উদ্ভট পাত্রে যাদের ব্যাখ্যান
অহিংস হাঁসের পায়ে ভক্তি বেশে সমর্পিত তেমন দর্শন
রাজ চক্রবর্তী নয়, আদান-প্রদানে ব্যস্ত প্রেরণা আখ্যান
তবুও নিখুঁততম তীব্র কিছু ভাষা যা এ সময় অতীত
বোধগম্য হতে পারে প্রেরণা অতীত হলে ধৈবত মায়াতে
ঋষভের প্রেম হেতু নামের মায়ায় যার থাকে না সম্বিত
সে নয় কবির যোগ্য, যার থাকা পুতুলের ছায়া ও ছবিতে
অথচ নিপুণ ছিল চর্চিত সে দেহভঙ্গি মুদ্রার প্রকার
যাঁর জন্য অনর্থক বাগাড়ম্বরপূর্ণ এ কলম প্রহার
৫
চক্ষুষ্মান
পঙ্কজ ঘোষ
আলো দাও,
শহর ভিজিয়ে দাও আলোয় আলোয়
দ্যাখো রাত্রি বাড়ছে কেমন সুনিপুণ প্রতিনায়কের মতো
প্রহরের প্রতিটা মুহূর্ত কেমন শরীর দিচ্ছে ছেড়ে,
যেন একে একে দাহ করা হবে
এমন থমথমে হয়ে আছে সময়
অথচ অজুহাতে খোয়া যাচ্ছে ভোরের ইশারা
অন্ধের শহরে কেমন সব পুড়ে যাচ্ছে পাতাদের ঘর
আপাতত জোছনা লেখা স্থগিত রেখে
এসো, শহর করে তুলি ভীষণ চক্ষুষ্মান
৬
মাটি
বিভা দাস
মাটির একটা নিজস্ব ঘ্রাণ আছে –
অনেকেই সেটা চেনে।
আমি সেই ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে অনেক দিন
ধরে খুঁজে পাই একটি ভূমিখণ্ড।
আমি আর আমার মতো অনেকেই
যাদের শৈশব, কৈশোর যৌবনকে বুকে আগলে রেখেছিল সে।
বিকেলের পড়ন্ত রোদে সেই জমিতে সকলের পায়ের ঘসায় যে গন্ধ বেরোত
সেই মিষ্টি গন্ধকে বর্ণনা করার মতো কোনও শব্দ খুঁজে পাইনি আজও –
ঘাসের কচি শিকড় দাঁতে কাটতে কাটতে
কত স্বপ্নের জাল বুনেছে কিশোরের দল।
এক খণ্ড সবুজের বুকে সদ্য নামা সন্ধ্যার অন্ধকারে মিশে গেছে কত মান অভিমান।
কত ভেঙে যাওয়া ভালোবাসার গল্প।
আস্তে আস্তে ঘাস ঢাকা পড়তে লাগল রোজ একটু একটু করে –
শৈশব, কৈশোর যৌবন ছিটকে গেল আপন
কক্ষপথে,
এখন গন্ধের রেখা ধরে খুঁজে পাওয়া ঠিকানায়
ঘেঁষাঘেঁষি কংক্রিটের স্থবিরতা।
৭
স্বপ্ন রে তুই
ছবি ধর
লাখ যত্ন করে তোকে বসাই আসনে
বাঁধন খুলে পালিয়ে যাস এক লহমায়?
স্বপ্ন যদি সত্যি হত একটি বারের মতো
গেঁথে রাখতাম সব স্বপ্ন এক ফরমায়।
কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণ করতে বেপরোয়া,
সুখপাখির মতো করি মননে লালন।
চোরাগলি ধরে নিমেষে হোস উধাও?
সুখের ঘোরে তোর সইব আস্ফালন।
নেপথ্যে কার ইঙ্গিত শুনে চলিস তুই?
খুঁজি আতিপাতি আঁকবই স্বপ্নসুখ।
আবছায়া ধূসরতা কাটিয়ে কাছে আয়
স্বপ্নগুলো সত্যি হলে কাটবে এই অসুখ।
The submit কবিতা appeared first on Uttarbanga Sambad.