কবিতা

কবিতা

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


উত্তরহীন-জীবন
নন্দা হাংখিম
 
(নেপালি থেকে
অনুবাদ কৃষ্ণ প্রধান)

জীবন একটা জুয়া না কি!
জয়-পরাজয় শেষ হওয়া,
জীবন এটা ধোঁয়া নাকি!
শ্মশানের উপর উড়ে যাওয়া,
কিছুই বলতে পারা যায় না
কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাচ্ছি?
কেউ কেউ বলে এটা একটা সংগ্রাম-
সংগ্রাম থেকে আমি কী পেয়েছি!
পৃথিবীতে যতই যুদ্ধ করেছি না কেন,
শত্রুতার দোষ পেয়েছি,
আর এই ক্ষতে পিষ্ট হয়ে
নরকে যেতে বসেছিলাম!
জীবন একটা যুদ্ধ নাকি!
বাংকারে লুকিয়ে থাকতে হবে!
জীবন একটা আরোহণ নাকি!
আরোহণের সময় পেরোতে হবে!
কেউ কেউ বলে শাস্তি, তাহলে
আমার অপরাধ কী ছিল?
যখন আমি পৃথিবীর উপকার করেছি,
কেন আমি দোষী হয়ে গেলাম?
এই দোষের জন্য চিন্তিত হয়ে,
স্বপ্নের আকাশে হারিয়ে গেছি!
জীবন কি মিষ্টি স্বপ্ন?
জীবন কি তিক্ত দুঃস্বপ্ন?
উত্তর খুঁজতে হারিয়ে গেলাম
এটি একটি উত্তরহীন জীবন।

তোকে

 

অজয় মজুমদার 

 

আদর মেখে জড়িয়ে ধরি বুকে

নরম আলো পিছলে যাচ্ছে গায়ে

মুঠোয় ভরা জ্যোৎস্না রাতের মতো

সমর্পণের ভাষা কি এমনই হয়

 

সোহাগ জলে ভিজতে থাকে আজ

অভিমানের ভার জমানো আঁখি

তোমার ঠোঁটের স্টেশন চত্বরেতে

আমার বাড়ির নতুন ঠিকানা লিখি

 

উমাসুন্দরী

 

কৌশিক সেন

 

কলপাড়ে এঁটো বাসন জড়ো হয় রোজ।

 

উমাদি আসে না বহুদিন।

জ্যোৎস্নার রাতে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে,

শুনেছি।

 

থালার পর থালা, বাটির পর বাটি

মাছের কাঁটা ঠুকরে খায় কাক

বসন্ত ডাক দেয় পোড়া তেজপাতাকে।

 

চুল্লুতে চুর হয়ে নালার ধারে উমাদির প্রেমিক

পনেরোতলার ভাড়ার থেকে পড়ে গেছে উমাদির স্বামী

পঙ্গু এখন।

 

বাসনের পাহাড়।  কলপাড়ে নিস্পন্দ আকাশ

তুষারাবৃত বাসনচূড়া,

হুহু হাওয়া দিলে পাখিরা ফিরে যায়

সরোবরে।

 

দেখেছিলাম, সেই শেষবার

পরিযায়ী পাখিদের দলে ভিড়ে গেছে

বাগদিপাড়ার উমাদি।

জন্মদাগ
মাধবী দাস

বৃষ্টি থেমে গেছে। রাস্তা জুড়ে পড়ে আছে
শীতার্ত বকুল ফুল। জীবিত ও মৃত।
আর পড়ে আছে কিছু মরকত রঙা
বকুলের পাতা।
মেঘলা ভেজা দিনে একটানা ভিজতে ভিজতে
পাতারা কি ভেবেছিল পরমায়ু এত কম কেন?

কোনও কোনও পাতা এত বৃষ্টি
বুকের ভেতর জমা করে রাখে –
সারাটা জীবন বৃষ্টি পড়ে সেই সব
গাছের তলায়। লেগে থাকে জন্মদাগ…
বর্ষাদিনে বকুলের তলায় তলায়
সেই জন্মদাগে খুঁজি মাকে!

পথে পথে শুয়ে থাকা বকুল ফুলেরা
কবে যে ‘মা’ হয়ে গেল বুঝিনি। বুঝি না!

কুহু

 দীপশিখা পোদ্দার

বড় বাড়িতে ঢুকতে না-পারা তোমার বিষণ্ণ লেখাটির

নাম রাখো, ‘কুহু’,

তারপর তাকে বসন্তে উড়িয়ে দাও।

বাতাসের গায়ে চিরদিন অনন্তের নাম লেখা থাকে,

যেভাবে মানুষ ভেসে যায় আরেক মানুষে,

যেভাবে আলো ভেসে আসে চোখ-সওয়া অন্ধকারে

দূর থেকে গন্ধ আসে প্রিয় মানুষের,

কবিতারও রক্ত মাংস আছে,

প্রেম আছে,

কষ্ট পেলে শয্যা পায় তারও।

কবিতাও জানে কীভাবে অশ্রুর থেকে পিছোতে পিছোতে

সন্তরণ শিখে নিতে হয়।

 

বড় বাড়িতে ঢুকতে না-পারা বিষণ্ণ লেখাটির

নাম রাখো ‘কুহু’।

আরও বেশি ভালোবাসো তাকে,

আরও নতুন নতুন আদর চেনাও,

যুদ্ধ কি শুধুই অস্ত্রে অস্ত্রে হয়?

 

অপমানে, অবজ্ঞায়

ফিরে যেতে যেতেই শক্ত হয় পায়ের তলার মাটি।

দাঁড়াবার জায়গায় কখনও তো বন্ধুও থাকে!

 

চোরকাঁটা

 

ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মণ্ডল

 

তীরগুলো ছুটে আসছে খুব

নরম মাটিতে আঘাত করছে

কিন্তু দাঁড়াতে পারছে না।

 

তবু শিকারির প্রচেষ্টার শেষ নেই

সে যেন এর শেষ দেখেই ছাড়বে।

 

অর্বাচীনের বোধের বাইরে সবই

তীরগুলো চোরকাঁটার মতো ফোটে

তবু আঘাতের জায়গা থেকে

এদের তুলে দিতে পারলেই হল।

 

তখন খোলা আকাশের নীচে

মখমল ঘাসের ওপর নিশ্চিন্তে শুয়ে

আকাশের সাতটি প্রিয় তারা

দেখার সে কী সুখ!

 



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *