সমর রায়চৌধুরী
১
জাদু
হাওয়ায় কি ওড়ে শুধু তুলোর আঁশ, ফুলের রেণু বা পাখির পালক?
আমি তো দেখি কথাও ওড়ে, জনশ্রুতি বা গুজব
ওড়ে এমনকি কত কত দৃশ্যও — গ্যারি সোবার্সের ব্যাট,
গান্ধিজির গোল চশমা, ইহুদি মেনুহিনের ভায়োলিন
ভ্যান গগের তুলি, চার্লি চ্যাপলিনের লাঠি
জীবনানন্দের কবিতার পাণ্ডুলিপি থেকে
শালিকে হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছাটি
লেখার মুহূর্তটি ঝরে পড়ে যেমন—
আকাশের কার্নিশ থেকে আমার মাথার ওপর খসে পড়ে
অ্যারিন্তোস দ্য নাসিমান্তো পেলের পা থেকে ছিটকে আসা ফুটবল
ঝরে পড়ে, ঝরে চলে, ঝরে পড়ে, এরকম কত কিছুই না ঝরে চলে অবিরাম…
২
উপলব্ধি
কবরের নীচে শুয়ে আছেন মেরিলিন মনরো
কবরে নীচে শুয়ে আছেন জন এফ কেনেডি
কেউই ভোলেননি কাউকে
দুজনের প্রতি দুজনের আকর্ষণ দুর্নিবার
কেউ দেখুক না দেখুক, বুঝুক না বুঝুক —
টের পাচ্ছি আমি সবার অলক্ষে
মাটির তলা দিয়ে নীরবে
দুজনেরই মাটির আঙুল একে অপরের দিকে ধীরে ধীরে
সুরসুর বা তিরতির করে এগিয়ে চলেছে ক্রমশ
একে অপরের মাটির সাথে মিলিত হবার আকাঙ্ক্ষায়…
৩
কেমিস্ট্রি
ভাঙচুর করে, এটার সাথে ওটা, ওটার সাথে সেটার মিশ্রণ ঘটিয়ে দেখতে চাই সম্পূর্ণ এক পৃথক যৌগ পাওয়া যায় কি না! তাই পৃথিবীর জলের সাথে আকাশের স্থলের, তাই সকল রুঢ় নিষ্ঠুর পুরুষদের ভেতর নারীর কিছুটা নম্রতা, সহনশীলতা ও মমত্ব, এবং মুসলমানদের ভেতর কিছুটা হিন্দুত্ব ও একই সাথে উলটোটাও; পরিশেষে এমন নেশায় আক্রান্ত যে গদ্যের ঝলমলে রৌদ্রে কখন যে কবিতার স্নিগ্ধ ছায়া এসে পড়ে ‘আর ঢেকে দেয় তোমাকে আমাকে’ নিজেরই অজান্তে তা আমি টের পাই না ।
৪
একটি না পাঠানো চিঠির খসড়া
এডুইনা প্রিয়তমাসু,
একটু বলে কয়ে দেখো না বাপু তোমার কর্তাকে, যাতে অখণ্ড ভারতকে খণ্ডিত করার অপপ্রয়াস বা উদ্যোগ থেকে তিনি বিরত থাকেন। না হলে এর মাশুল কিন্তু গুনতে হবে আমাকে এবং সেটা একদিক থেকে তোমাকেও ডার্লিং! কেননা তখন ভারতীয়দের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জোরদার ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শামিল হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না! তখন কি আর আমাদের আগের মতো লুকিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ ইত্যাদি চালানো সম্ভব হবে? মাথার উপর ‘ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম সবকো সম্মতি দে ভগবান’ এর ধ্বজাধারী এবং অহিংসার পূজারি এক বাপুজি আছেন না, তাঁকে আমি খুবই সমীহ করি। সাবধান!
The publish কবিতাগুচ্ছ appeared first on Uttarbanga Sambad.