‘ও যেন শান্তিতে থাকে’, পহেলগাঁও হামলায় ছেলেকে হারিয়ে মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা বিতানের বাবার

‘ও যেন শান্তিতে থাকে’, পহেলগাঁও হামলায় ছেলেকে হারিয়ে মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা বিতানের বাবার

স্বাস্থ্য/HEALTH
Spread the love


সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বলা হয়, বাবার কাঁধে সন্তানের শব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভার। যে বাবা-মায়ের জীবন থেকে তাঁদের পূর্ণবয়স্ক সন্তানের অস্তিত্বই মুছে গিয়েছে, পুজোর ঝলমলে আলো কি আর প্রবেশ করতে পারে তাঁদের আঁধার ঘরে? কোনও আনন্দই কি সন্তান হারানোর যন্ত্রণাকে ভুলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে? ২২ এপ্রিল ২০২৫। পাটুলির বিতান অধিকারী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন।

স্বপ্নসম বৈসরন উপত্যকায় কাটাচ্ছিলেন স্বপ্নের মতো এক ছুটি। হঠাৎই যেন ঘেঁটে গেল সব। ভারতের ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ পরিণত হল মৃত্যুপুরীতে। সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে নিহত হলেন বিতান। এই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রইলেন তাঁর স্ত্রী-সন্তান। বিতান ছাড়াও সে যাত্রায় প্রাণ হারান আরও ২৫ জন। যার মধ্যে অধিকাংশই সেখানে ছুটি কাটাতে আসা সাধারণ মানুষ। উপত্যকা ভরে উঠল নিরীহদের কান্না আর আর্তনাদে। গোটা দেশ শোকস্তব্ধ হল পহেলগাঁও হামলার অভিঘাতে।

এরপর পেরিয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস। প্রতিবেশী-বন্ধুবান্ধব ছাড়াও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের মুখপাত্ররা শোকপ্রকাশ করেছেন এই ঘটনায়। বিতানের পরিবার আর্থিক সাহায্য পেয়েছে। সম্প্রতি একুশে জুলাইয়ের মঞ্চেও বিতানের বাবা-মাকে সম্মানজ্ঞাপন করে এক মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু এই শোকজ্ঞাপন, আর্থিক সাহায্য– এরই সমান্তরালে তীব্র পুত্রশোক… মানসিকভাবে কেমন রয়েছেন বিতানের বাবা-মা? যে কোনও উৎসবেই তো মানুষ চায় কাছের মানুষদের কাছে পেতে। বিশেষত, বাঙালির কাছে দুর্গাপুজোর আবেগ এমনই। উৎসব মুখরিত দিনগুলোতেই কি সন্তানকে আরও বেশি মনে পড়বে না বাবা-মায়ের?

পাটুলির ছেলে হলেও বিতান অধিকারী পরিবার-সহ থাকতেন ফ্লোরিডায়। কলকাতায় ফিরে, ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে যেতে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বিতানের বাবা জানালেন, তিনিই প্রতিহত করেন ছেলেকে। উপদেশ দেন, আপাতত যেন স্ত্রী-সন্তান নিয়েই ঘুরে আসেন বিতান। হাওয়া বদল সেরে যে ছেলের হাসতে হাসতে ফিরে আসার কথা ছিল বাবা-মায়ের কাছে, তাকে ফিরতে হল কফিনবন্দি অবস্থায়। এ যেন যেকোনও অভিভাবকের কাছে চরমতম দুঃস্বপ্ন। কিংবা তারও চেয়ে বেশি। আঁধারের চেয়েও ঘনতর কোনও আঁধার। পুত্রশোকের চেয়ে বেশি অন্ধকার আর কী হতে পারে?
তবুও, বচ্ছরকার দিনে মা আসবেন। পুজোয় কী চাইবেন মা দুর্গার কাছে? অমূলক প্রশ্ন নিঃসন্দেহে, তবু কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বিতানের মায়ের গলা! বলেন, “আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। কেবল আমার সন্তান যেখানে গিয়েছে, সুস্থ থাকুক, শান্তিতে থাকুক। আমি মনে করি, ওর পুনর্জন্ম হয়ে গিয়েছে এতদিনে। এই জন্মটা যেন ভালো হয়।” ‘অপারেশন সিঁদুর’ কিংবা ‘মহাদেব’, অতি সাধারণ ঘরোয়া মায়ের কাছে সবটুকুই ধোঁয়া-ধোঁয়া। উজ্জ্বল কেবল সন্তানের মৃত্যু-পরবর্তী সময়ের ঘন অন্ধকার, শত প্রদীপের আলোতেও যার আলোকিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *