ওডিশায় চেনা খেলা

ওডিশায় চেনা খেলা

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


নেহরু-গান্ধি পরিবার বাদে দেশের বাকি সব মনীষীকে আঁকড়ে ধরার কৌশল বিজেপির বরাবরের। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত থাকার ইতিহাস আরএসএস বা বিজেপির পূর্বসূরি ভারতীয় জনসংঘের না থাকায় বাধ্য হয়ে এই কৌশল তাদের নিতে হয়। গুরু গোলওয়ালকার বা বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে নিয়ে এ দেশে আগ্রহ সীমিত। আবার গান্ধিজির ঘাতক নাথুরাম গডসেকে হিন্দুত্বের প্রতীক মনে করলেও দেশের মানুষের ভাবাবেগের কারণে তাঁকে নিয়ে মাতামাতি করাটা সমস্যাজনক।

তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে বিজেপিকে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রতীক হিসেবে মহাত্মা গান্ধির চশমা ব্যবহার করতে হয়। আবার কখনও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে মতানৈক্যের গল্পের গোরুকে গাছে তুলে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সবথেকে বড় মূর্তি স্থাপন করতে হয়। গেরুয়া শিবিরের নিজস্ব কোনও জাতীয় আইকন না থাকায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং ভারতের সংবিধান তৈরির খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান বিআর আম্বেদকরকে নিয়ে মাতামাতি করতে হয়।

পদ্ম ব্রিগেডের এই কৌশল যে নিছক লোকদেখানো, সেটা ওডিশাবাসী এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক, ওডিশাবাসীর কাছে দলমতনির্বিশেষে বিজু পট্টনায়েক নিঃসন্দেহে একজন আইকন। ওডিশার সাধারণ মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, রাজ্যের উন্নয়নে বিজু এবং তাঁর ছেলে নবীন পট্টনায়েকের অবদান যথেষ্ট। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিজুর গুণমুগ্ধ বলে নিজেদের দাবি করেন। বিজুর জন্মদিনে শ্রদ্ধাও জানান তাঁরা।

অথচ পালাবদলের ওডিশায় এখন থেকে আর বিজু পট্টনায়েকের জন্মদিনকে পঞ্চায়েতিরাজ দিবস হিসাবে পালন করার গত তিন দশকের পরম্পরায় ছেদ টেনেছেন ওডিশার এখনকার বিজেপি সরকার। বিজুর জন্মদিনে ছুটির প্রথাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিজেডি আমলে তৈরি ৪০টি সরকারি প্রকল্পের নাম বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওডিশার মোহনচরণ মাঝির সরকার। ওই প্রকল্পগুলির বেশ কয়েকটি বিজুর নামে আছে।

বিজু পট্টনায়েকের ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার এই পদক্ষেপের স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনা করেছে ওডিশার প্রধান বিরোধী দল বিজেডি। কংগ্রেসও আপত্তি তুলেছে। আইকন আঁকড়ে ধরার খেলা এবং কাজ ফুরিয়ে গেলে তাঁকে লোকচক্ষুর আড়ালে পাঠিয়ে দেওয়ার এই খেলা বিজেপির নতুন নয়। ভোট ও ক্ষমতার প্রয়োজনে আইকন ব্যবহারের এই কৌশল আরেকবার বেআব্রু হল।

গান্ধিজি, নেতাজি, প্যাটেল, আম্বেদকর থেকে বিজু পট্টনায়েকের অবদানকে ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও বিজেপি এবং সংঘ পরিবার যে ধরনের হিন্দুত্বে বিশ্বাসী, তার সঙ্গে ওই মহান নেতাদের মতাদর্শ খাপ খায় না। হাজার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব নয়। কিন্তু বৃহত্তর সমাজের কাছে পৌঁছোনোর জন্য ওই মনীষীদের অন্তত প্রকাশ্যে আঁকড়ে ধরা হয়। কিন্তু চরিত্রগত, ভাবনাগত অবস্থান যে একেবারে আলাদা, সেটা বারবার সামনে চলে আসে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা সংসদে দাঁড়িয়ে আম্বেদকরের নামোচ্চারণের বদলে ভগবানের নাম করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যাঁর লেখা বর্ণপরিচয় পড়ে আপামর বাঙালি বাংলা ভাষার পাঠ শিখেছে, সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগে জড়িয়ে আছে বিজেপির নাম। পশ্চিমবঙ্গের জনমানসে ছাপ ফেলার লক্ষ্যে প্রায়ই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দের নাম নেন বিজেপির নেতারা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বা স্বামীজির সংকীর্ণ মানসিকতামুক্ত, উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, পরমতসহিষ্ণুতার সঙ্গে বিজেপি-আরএসএসের মনুবাদী চিন্তাভাবনা খাপ খায় না।

ভোট এলেই ভারত-পাকিস্তান, হিন্দু-মুসলিম, দেশভক্ত-দেশদ্রোহী ইত্যাদি দ্বন্দ্ব উসকে তোলা হয় ভোটারদের মধ্যে মেরুকরণ ঘটানোর লক্ষ্যে। যা বিজেপির কাছে ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কে লেটার মার্কস অর্জনের মতো। ক্ষমতায় আসার মাত্র আট মাসের মধ্যে ওডিশাকে বিজেপি ধীরে ধীরে বিজু পট্টনায়েকমুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আগামীদিনে সেই কৌশল অন্য অহিন্দিভাষী রাজ্যেও যে করা হবে না, তা হলফ করে বলা কঠিন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *