সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মোহিনী মোহন দত্ত। দিন কয়েক আগেও এই নামের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না কেউই। সম্প্রতি দেশব্যাপী চর্চায় উঠে এসেছে এই নাম। আর হবে নাই বা কেন? টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার প্রয়াত রতন টাটা মোহিনী মোহন দত্ত নামের রহস্যময় এক জনৈক ব্যক্তিকে দিয়ে গিয়েছেন ৫০০ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি। বিষয়টি নজরে আসতেই স্বাভাবিকভাবেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে কে এই ব্যক্তি? কী তাঁর পরিচয়? রতন টাটার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই বা কী?
এমনিতে দানশীল হিসেবে পরিচিত রতন টাটা। বিভিন্ন দাতব্য কাজের জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রতন টাটা এনডাওমেন্ট ফাউন্ডেশন। স্টার্টআপ সংস্থাতেও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করতেন তিনি। যাতে অর্থের অভাবে কোনও ভালো স্টার্টআপ ধ্বংস না হয়ে যায়। আর এই সূত্রেই পরিচয় হয় রতনের পরিচয় হয় মোহিনী মোহন দত্তের সঙ্গে। জানা যাচ্ছে, রতনের সঙ্গে প্রায় ৬ দশকের বন্ধুত্ব ছিল মোহিনীর। স্ট্যালিয়ন নামে একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক ছিলেন তিনি। স্ট্যালিয়নের ৮০ শতাংশ মালিকানা ছিল দত্ত পরিবারের। বাকি ২০ শতাংশ মালিকানা ছিল টাটা গোষ্ঠীর কাছে। ২০১৩ সালে সেই সংস্থাটি তাজ গ্রুপ অফ হোটেলসের অংশ তাজ সার্ভিসেসের সাথে জুড়ে গিয়েছিল। জানা যায়, মোহিনী মোহন দত্ত একটা সময়ে থমাস কুকের অ্যাসোসিয়েট সংস্থা টিসি ট্রাভেল সার্ভিসেসের ডিরেক্টর পদেও ছিলেন। যদিও রতন টাটার সঙ্গে মোহিনীর সম্পর্কের কথা খুব একটা কেউ জানতেন না।
মোহিনী মোহন দত্ত অবশ্য বহুবার প্রকাশ্যে রতন টাটার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এনেছেন বলে জানা যায়। রতনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার সময় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘জামশেদপুরের একটা হোটেলে প্রথমবার রতনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। তখন মাত্র ২৪ বছরের যুবক রতন।’ মোহিনীর দাবি, রতন টাটা তাঁকে সাহায্য করেছিলেন ও তৈরি করেছিলেন। ২০২৪ সালে রতনের জন্মদিনেও আমন্ত্রিত ছিলেন মোহিনী। এই অনুষ্ঠানে টাটার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কের সূত্র ধরেই রতন এই বিপুল অর্থ দিয়ে গিয়েছেন মোহিনী মোহন দত্তকে।
টাটার শীর্ষ কর্তাদের দাবি অনুযায়ী, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব থাকলেও মোহিনী দত্ত ও রতন টাটার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। তিনি ছিলেন, টাটার অত্যন্ত আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত। মোহিনী নিজেকে টাটার দত্তক পুত্র হিসেবে দেখতেন। অবিবাহিত নিঃসন্তান টাটার পরিবারের সঙ্গে মোহিনীর সম্পর্ক এখনও বর্তমান মোহিনীর কন্যা একদশকেরও বেশি সময় ধরে টাটা ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত।
তবে রতন টাটা তাঁর উইলে মোহিনী মোহন দত্তকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি দান করলেও, সরকারিভাবে এখনও রতনের সম্পত্তির মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রাথমিকভাবে টাটার ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ঘড়ি, পেইন্টিংয়ের মতো সামগ্রী এবং প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট পেতে পারেন মোহিনী। অন্যদিকে টাটার সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে টাটা সন্সের ০.৮৩ শতাংশ অংশীদায়িত্ব। যে সম্পত্তি যাবে টাটা এনডাওমেন্ট ফাউন্ডেশনে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি বিনিয়োগ করেছেন ওলা, পেটিএম, লেন্সকার্ট, জিভামে, স্ন্যাপডিলের মতো স্টার্টআপ সংস্থায়। ৩৫০ কোটির ফিক্সড ডিপোজিটের পাশাপাশি বছরে আড়াই কোটি টাকার বেতন নিতেন তিনি। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে আলিবাগে ২০০০ স্কোয়ারফুটের একটি বাংলো এবং মুম্বইয়ের জুহু তারা রোডে দু’তলা একটি বাড়ি।