স্টাফ রিপোর্টার: ফুটবলারদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইরানে এসিএল-২-এর ম্যাচ খেলতে যায়নি মোহনবাগান। সেপাহান এসসি’র বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে হাজির না হওয়ায় জেসন কামিংস, জেমি ম্যাকলারেনদের নিয়ে সিদ্ধান্তও নিয়েছে এএফসি। এবারের এসিএল-২ থেকে মোহনবাগান নাম সরে দাঁড়িয়েছে বলেই ধরছে এশিয়ার ফুটবল নিয়ামক সংস্থা। আর যা নিয়ে মোহনবাগান সমর্থকদের মধ্যে বেশ খেদ রয়েছে। তাঁরা সমালোচনায় সরব হয়েছেন। আর এবার এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন মোহনবাগান সচিব সৃঞ্জয় বোস। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
কেন ভারতীয় ফুটবলারদের নিয়ে ইরানে খেলতে গেল না সবুজ-মেরুন ব্রিগেড? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ সমর্থকরাও। এক সংবাদ সম্মেলনে সৃঞ্জয় বলেন, “এএফসি খেলতে না যাওয়া নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। আসলে সমালোচনা করাটা খুব সহজ। ইরানে যুদ্ধ চলছে। এটা নিয়ে কারওর কোনও মাথাব্যথা নেই! বিদেশিরা সেই কারণে যেতে চায়নি। ওদের দেখে দেশীয় খেলোয়াড়রাও ইরান যেতে চায়নি। যুদ্ধবিধ্বস্ত জায়গায় গিয়ে কোনও ফুটবলারের যদি ক্ষতি হয়, তার দায় কে নেবে? সেখানে বিমা নিরাপত্তাও নেই। তাই চরম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এই সফর। সেই কারণেই ফুটবলাররা যেতে চায়নি।”
গতবারেরও মতো এবারেও এএফসি’র কাছে ইরানের ক্লাবের বিরুদ্ধে ম্যাচটি সেদেশ থেকে সরিয়ে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে করার আবেদনও জানিয়েছিল মোহনবাগান ম্যানেজমেন্ট। এমনকী সবুজ-মেরুনের ফুটবলাররা এই নিয়ে সরবও হয়েছিলেন। যদিও এএফসি এই আবেদনে সাড়া দেয়নি। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ম্যাচ খেলতে গিয়ে যদি কোনও ঘটনা ঘটে তার দায় কে নেবে? সৃঞ্জয় বলেন, “আপনারা সবাই জানেন, ভারতীয় ফুটবল অনিশ্চয়তার মুখে। আইএসএল হবে কি না, কেউ জানে না। আমাদের এত ভালো দল করা হয়েছিল এএফসি’কে মাথায় রেখেই। আমরা তো আগেও ইরান যাইনি। মনে রাখতে হবে, ইরানে এখনও একটা সমস্যা চলছে।”
শনিবার ঘোষণা হয়েছে আইএফএ শিল্ডের সূচি। এই প্রসঙ্গে সৃঞ্জয়ের সংযোজন, “প্রথমে আইএফএ শিল্ড খেলতে চাইনি। কারণ প্রতিযোগিতার মান একেবারে নেমে গিয়েছে। ছয় দলীয় টুর্নামেন্টে হবে মাত্র সাতটা ম্যাচ। শেষ তিন বছর কেন শিল্ড করতে পারেনি আইএফএ? মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ছাড়া কলকাতার অন্য কোনও টিম খেলছে না কেন? মাঝখানে মধ্যে ফিফার উইন্ডোতে আমাদের আট ফুটবলার চলে গিয়েছিল। কলকাতার একটা টুর্নামেন্ট খেললে পুরো দল নিয়ে খেলব। এটাই লক্ষ্য ছিল আমাদের। যে টুর্নামেন্টের এত গরিমা, যা এককালে অন্যতম সেরা প্রতিযোগিতা ছিল, তা কেন উইন্ডোর স্টপ গ্যাপের মধ্যে আয়োজন করতে হবে? যেহেতু একটা টিমের পুরো দল আছে, মূলত তাদের অনুরোধেই হয়তো এই প্রতিযোগিতা। এখন তিন ফুটবলার – আপুইয়া, থাপা, মনবীরকে ছেড়েছে। আমরাও খেলতে রাজি হয়েছি। আমরা যদি এএফসি’তে যেতাম, ওখান থেকে ফিরেই খেলতে হত সুপার কাপ। কখন সময় পেতাম শিল্ড খেলার? সমর্থকদের অনুরোধ, বাস্তবটা বুঝুন। ২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত যে সাফল্য পেয়েছে মোহনবাগান, কোন ক্লাবের এত সাফল্য রয়েছে?”
ক্লাব বনাম ইনভেস্টরের মধ্যে কি কোনও সমস্যা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে মোহনবাগান সচিবের সাফ জবাব, “ক্লাব বনাম ইনভেস্টরের কোনও ফারাক নেই। ওদের সঙ্গে কথা হয়েছে। একটা কিছু হলেই ইনভেস্টর খারাপ হয়ে যায় না। যখন দ্বিমুকুট পেল, তখন সবাই বাহবা দিচ্ছিল। তিন মাসের মধ্যে সব কিছু খারাপ হয়ে গেল? সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এত টাকা খরচ করে দল করছেন। তাঁর প্রতি ন্যূনতম সম্মান দেখানো উচিত। আশা করব, সবার মধ্যে শুভবুদ্ধি ফিরবে। ক্লাব অবশ্যই এ ব্যাপারে কথা বলবে তাদের সঙ্গে। ক্লাবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রয়েছে।”
ভারতীয় ফুটবলে এই অচলাবস্থা। কোথাও গিয়ে কি মনে হচ্ছে গোয়াঙ্কা ফুটবলের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে? সৃঞ্জয়ের কথায়, “গোয়েঙ্কার ব্যবসায়িক জীবনেও অনেক অনিশ্চয়তা এসেছে। কিন্তু আমার মনে হয় মিস্টার গোয়েঙ্কা এত সহজে আগ্রহ হারান না। আগের বছর যখন ইরান যায়নি মোহনবাগান, তখন কি প্রশ্ন করেছিলেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন কি না? ইরানের রাস্তায় তো লোকে গোলাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে না। সমর্থকদের দুঃখ থাকতে পারে, কিন্তু সেটারও একটা মাত্রা আছে।”