পৌষালি কুণ্ডু: হঠাৎ কমে যাচ্ছে গাড়ির মাইলেজ? প্রতি লিটারে ১৭-১৮ কিলোমিটার চলে যেত যে গাড়ি সেই গাড়ি এখন এক লিটারে মাত্র ১৩-১৪ কিলোমিটার যাচ্ছে! কারও আবার মাইলেজ কমে দাঁড়িয়েছে ৮-৯!
আচমকা গাড়ির মাইলেজ কমার জন্য কেন্দ্রের ই২০ জ্বালানি নীতিকেই দায়ী করছেন গাড়ি ও মোটরবাইক আরোহীরা। তাঁদের অভিযোগ, গাড়িতে ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল (ই-২০) ভরার পর থেকেই এই সমস্যার সূত্রপাত। শুধু মাইলেজ কমাই নয়, ২০ শতাংশ ইথানল মেশানো পেট্রোল তাঁদের গাড়ির ইঞ্জিনেরও ক্ষতি করছে। বিশেষ করে বিএস-৪ মডেলের একটু পুরনো গাড়িতেই সব চেয়ে বেশি সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ।
মিলন বারসোপিয়া নামে তেলঙ্গানার এক যুবক এক্স হ্যান্ডলে কেন্দ্রের এই নয়া নিয়মের জন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করিকে বিদ্ধ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ই-২০ নীতির ফলে সাধারণ মানুষের গাড়ির মাইলেজ বাড়ায় জ্বালানি খরচ ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। অথচ ফুলেফেঁপে উঠছে নীতিন পুত্র নিখিলের সংস্থা সিয়ান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। চমকে ওঠার মতো বিষয় হল, গত বছর জুনে সিয়ান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের আয় হয়েছিল ১৮ কোটি টাকা। এ বছর জুনের রিপোর্ট অনুযায়ী, কোম্পানির আয় এক বছরের মধ্যে এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৫১০ কোটি! অতীতে মশলা, ভোজ্য তেল, বায়ো ফার্টিলাইজার, হোম কেয়ার, পার্সোনাল কেয়ার সংক্রান্ত পণ্য তৈরি করত নাগপুরের কোম্পানিটি। কিন্তু নিখিল গড়করির সংস্থা কার্বন থেকে ইথানল প্রক্রিয়াকরণ শুরু করতেই ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক। তারই ফলে গত পাঁচ বছরে সিয়ান অ্যাগ্রোর শেয়ার দর বেড়েছে ২,৪১৮ শতাংশ। ২০২০ সালে কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ২৯ টাকা। বর্তমান দর ৭৩৬ টাকা। গত এক বছরে সিয়ানের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫০৮ শতাংশ। গত এক মাসে বেড়েছে ৬৯ শতাংশ।
বেশ কয়েক বছর আগে দূষণ ও পেট্রোল আমদানির খরচ কমাতে ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, আখের ছিবড়ে ও ভুট্টার অংশ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ইথানল তৈরি করা হলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিগর্মন যথাক্রমে ৬৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ কমবে। পাশাপাশি পেট্রোলে ২০ শতাংশ মেশালে গাড়ির মাইলেজ যেমন বাড়বে, তেমনই আয়ু বাড়বে গাড়ির যন্ত্রপাতিরও। আবার একদিকে যেমন পেট্রোল আমদানির খরচ কমায় বিদেশি মুদ্রার সেভিংস হবে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আখ, ভুট্টা চাষিদেরও ৪০ হাজার কোটি টাকা দিতে পারবে কেন্দ্র।
এই সিদ্ধান্তের পর গত কয়েক বছর ধরেই ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মতো কেন্দ্রীয় তেল সংস্থাগুলির পাম্পে ই-২০ পেট্রোল বিক্রি শুরু হয়। ইথানলের দাম অনেক কম হওয়ায় লিটারপিছু পেট্রোলের দাম কমানো উচিত ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। কিন্তু সে পথে হাঁটেনি কেন্দ্র। অবৈজ্ঞানিকভাবে সব গাড়িতে ই-২০ পেট্রোল ভরার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরনো মডেলের গাড়ি ব্যবহারকারীদের। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মী সঞ্জয় পাল নামে এক নেটিজেন ফেসবুকে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে লিখেছেন, “পেট্রোল আমদানির খরচ কমায়, পরিবেশ দূষণ কমায় ই-২০। কিন্তু আমাদের অনেকের গাড়ি এই মিশ্রিত জ্বালানি ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ৪-৫ শতাংশ মাইলেজ কমাচ্ছে। গাড়ি স্টার্ট নিতে সমস্যা করছে। রবার হোস নষ্ট করছে। ফুয়েল ট্যাঙ্কের ক্ষয় করছে।”
ব্রাজিল ও ইউরোপের দেশগুলিতে ই-৫, ই-১০ ও ই-২০ পেট্রোল ভরার অপশন দেওয়া থাকে। গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা বুঝে ব্যবহারকারীরা বেছে নেন কোনটি ভরবেন। কিন্তু ভারতে শুরুতে ই-১০ পেট্রোল চালু করলেও হঠাৎই শুধুমাত্র ই-২০ পেট্রোল বিক্রিরই নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। আম আদমির মধ্যে ক্ষোভ বাড়তেই সেই নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করেন আইনজীবী অক্ষয় মালহোত্রা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর হবে প্রধান বিচারপতি বি আর গভইয়ের বেঞ্চে হবে মামলাটির শুনানি।