বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ২০২৪-এর ২৬ জুলাই ইউনূস বলেছিলেন, দেশে এখন দরকার অবাধ সংসদীয় নির্বাচন। তারপর ৫ অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানের জেরে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। অথচ আজ বাংলাদেশের অধিকাংশ দল যখন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে, ইউনূস তখন নানা ছুতোয় সেই ভোট আগামী জুন পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী।
সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন দলের বৈঠক ডেকেছিলেন ইউনূস। আওয়ামী লিগ হালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। উপরন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবিউনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রাক্তন পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সেই বৈঠকে কুড়িটি দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লিগকে বাদ দিলে বড় দল বলতে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি। জামায়াতে ইসলামি এখন নিষেধাজ্ঞামুক্ত। তারা ভোটে লড়বে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতারা জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে নতুন দল গড়েছেন। ভোট হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে বিএনপি নেতৃত্ব যথেষ্ট আশাবাদী। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের দাবি, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সমস্ত দলের প্রতিনিধি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি দরকার। এখানেই ইউনূসের যত জারিজুরি।
২০২৪-এর ৮ অগাস্ট ইউনূস ছাত্র নেতাদের অনুরোধে মুখ্য উপদেষ্টা হয়েছিলেন। শুরুতেই তিনি দুটো বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন- (১) জাতীয় সংসদ ভোটের আগে ব্যাপক সংস্কার জরুরি। অন্যথায় নির্বাচন করিয়ে লাভ নেই ও (২) ২০২৬ জুনের আগে ভোট অসম্ভব। কিন্তু বহু দলের এব্যাপারে তীব্র আপত্তি। বিশেষ করে বিএনপি’র। তাদের বক্তব্য, নির্বাচনি সংস্কার জরুরি হলেও সেটার জন্য এক মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সুতরাং ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটপর্ব সেরে নিতে অসুবিধা নেই।
ইউনূস এখনই ভোটে নারাজ বলে চাপ সৃষ্টি করছেন নানাভাবে। কখনও বলছেন, কেউ সহযোগিতা করছে না, তাই তিনি ইস্তফা দেবেন। কখনও দেশে ‘যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি’ রয়েছে বলে আতঙ্ক তৈরি করছেন। আবার কখনও বিভিন্ন দলের মধ্যে ঝামেলা বাধিয়ে দিচ্ছেন।
কিছুদিন আগে বিএনপি নেতারা ভোট ভোট করে ইউনূসের মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলেন। খালেদা তখন দীর্ঘ চিকিৎসার পর লন্ডন থেকে সবে ফিরেছেন। খালেদার সঙ্গে কথা বলে ইউনূস পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাকি পদত্যাগ না করার জন্য ইউনূসকে অনুরোধ করেন। খালেদা-পুত্র তারেক রহমান কিছুদিন চুপ থাকলেন। ছাত্র নেতারা কার্যত হাতেপায়ে ধরে ইউনূসকে পদত্যাগ থেকে আটকালেন।
কিন্তু এই ধারণাটা ক্রমশ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে, এসব ইউনূসের চাল। ক্ষমতাসীন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ঘটনাচক্রে। এখন অত সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চাইছেন না। মনে হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টার পদ তিনি নিজে ছাড়বেন না। বিএনপি সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন দলের অভিযোগ, নির্বাচনি সংস্কারের দোহাই দিয়ে ইউনূস সংসদীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছেন। অথচ এত মাসের মধ্যে একটা সংস্কারও দেখলেন না দেশবাসী।
প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকে এযাবৎ অন্তত দশবার বিদেশ সফর হয়ে গিয়েছে তাঁর। ১০-১৩ জুন আবার লন্ডন যাওয়ার কথা। দু’একটি দল বাদ দিলে প্রায় সকলেই মনে করে, সংসদ নির্বাচন নিয়ে হেলদোল নেই প্রধান উপদেষ্টার। শুরুতে বলতেন, ২০২৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ জুনের মধ্যে নির্বাচন করে ফেলা হবে। কিন্তু তার আগে সারতে হবে নির্বাচনি সংস্কার।
কিন্তু এখন ভোট এবং উপদেষ্টা পদে নিজের সময়সীমা কার্যত বেঁধে দিচ্ছেন অন্তত ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে প্রধান উপদেষ্টা করেছিলেন ছাত্র নেতারা। এখন নিজের মর্জিতে চলেছেন ইউনূস।