দেশে তদন্ত সম্পূর্ণ না-হলেও ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনায় মৃত পাইলটকে দোষী সাব্যস্ত করে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ প্রকাশিত সংবাদে অস্বস্তিতে ভারত।
আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী ড্রিমলাইনার বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ার পরেই দেশের বিমানচালকদের সন্দেহ ছিল যে, ঘটনার দায় তাঁদের সহকর্মীদের ঘাড়েই চাপবে। ভারতে নাকি এটাই দস্তুর হয়ে উঠেছে। বিমানটির দুই চালকই যেহেতু মৃত, তাই দুর্ঘটনার দায় তাঁদের কারও ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে ল্যাঠা চুকে যায়। অন্য কারও গাফিলতি খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না। সাজার হাত থেকেও সবাইকে রক্ষা করা যায়। ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার তদন্তে যখন ‘এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ (‘এএআইবি’) নামে, তখন তদন্ত কমিটিতে কেন একজনও বিমানচালককে রাখা হল না– এই মর্মে ক্ষীণ প্রতিবাদ ওঠে বিমানচালকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে।
দুর্ঘটনার ঠিক একমাসের মাথায় ‘এএআইবি’ যে প্রথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা, বিমানটি ওড়ার এক সেকেন্ডের মধ্যে দু’টি ইঞ্জিনেরই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের দু’টি সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাট অফ’ অবস্থানে চলে যায়। বিমানটির ‘ব্ল্যাক বক্স’ থেকে দুই চালকের মধ্যে কথোপকথনের যে রেকর্ড মিলেছে তাতে একজন অন্যজনকে বলছেন, ‘আপনি কাট অফ করলেন?’ অন্যজনের উত্তর, ‘আমি করিনি।’ মার্কিন সংবাদপত্র ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর যে খবর নিয়ে দুনিয়াজুড়ে তোলপাড়, তাতে বলা, প্রবীণ পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়ালকে জ্বালানির সুইচ বন্ধ করতে দেখে নাকি নবীন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর আতঙ্কিত হয়ে প্রশ্নটি করেছিলেন।
ক্যাপ্টেন নাকি খুব শান্ত গলাতেই উত্তর দিয়েছিলেন। এএআইবি ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করেনি। কোন চালক প্রশ্ন করেছিলেন, আর উত্তর কে দিয়েছিলেন, সেটাও তদন্ত রিপোর্টে জানায়নি এএআইবি। তাহলে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ কোথা থেকে তথ্যটি পেল সে নিয়ে দেশের বিমানচালকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর রিপোর্টে দুর্ঘটনার ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলে যে তদন্তে ‘ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ যোগ দিত তাও রিপোর্টে উল্লিখিত। অর্থাৎ সংবাদপত্রের স্পষ্ট ইঙ্গিত, ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়ালের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
খবরটিতে ভারত খুবই অস্বস্তিতে। বিমানচালক সংগঠন সংবাদপত্রটির বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটি হল, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ দুর্ঘটনার জন্য ক্যাপ্টেনের ভুলকে ইঙ্গিত করে খবর প্রকাশ হতেই ড্রিমলাইনারের নির্মাতা সংস্থা ‘বোয়িং’-এর শেয়ার দর চড়চড়িয়ে বেড়ে যায়। যা দুর্ঘটনার পর, অনেকটা পড়ে গিয়েছিল। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ তাদের রিপোর্টে ‘বোয়িং’কে সম্পূর্ণ ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে দিয়েছে। এএআইবি-র চূড়ান্ত তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই এইভাবে মার্কিন সংবাদপত্রের মাধ্যমে দুর্ঘটনা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ভারতের অসামারিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের ব্যর্থতার দিকেই আঙুল তুলছে। মুখরক্ষা করতে কেন্দ্র বলছে তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে যেন কোনও জল্পনা না-হয়।