কেরলে নয়া আতঙ্কের নাম ‘মস্তিষ্কখেকো’ অ্যামিবা। ইতিমধ্যেই সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯। আক্রান্ত বহু মানুষ। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই সে রাজ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু সত্যিই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে? কীভাবে ছড়াতে পারে এই রোগ? কীভাবেই বা প্রতিরোধ করবেন এই রোগের? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন চিকিৎসক সাম্য সেনগুপ্ত, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ (পিডিটি), বিআইএন।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সাম্য সেনগুপ্তর কথায়, ‘অ্যামিবা সংক্রমণ নিয়ে সাম্প্রতিক আতঙ্কের মূল কারণ দু’টি জীবাণু— Naegleria fowleri ও Acanthamoeba। এই দুই জীবাণুই ফ্রি লিভিং অ্যামিবা অর্থাৎ উষ্ণ জলে বেঁচে থাকা মুক্তজীবী জীবাণু। যারা সুযোগ পেলে মানুষের মস্তিষ্কে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে।”
চিকিৎসকের কথায়, ”প্রথমবার ১৯৬৫ সালে এই রোগের কথা বর্ণনা করেছিলেন Fowler এবং Carter। এরপর থেকে বিশ্বে প্রায় ৫০০ কেস রিপোর্ট হয়েছে।” তাঁর কথায়, ”ভারতে এর সংক্রমণ কম থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হঠাৎ করেই বেড়েছে অ্যামিবার সংক্রমণ। কেরালায় একাধিক সংক্রমণের কথা সামনে এসেছে।” তবে Acanthamoeba সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বা সাব-অ্যাকিউট সংক্রমণ করে বলে মত সাম্য সেনগুপ্তের। তাঁর কথায়, ”করোনা পরিস্থিতির পর এর সংক্রমণ বাড়ছে। শ্বাসনালী এবং মিউকোজাল ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ায় এর সংক্রমণ বাড়ছে।”

কেমন হয় উপসর্গ:
চিকিৎসক সাম্য সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, রোগের শুরুটা হয় তীব্র মাথাব্যথা, উচ্চ জ্বর, বমি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া দিয়ে। দ্রুত স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয় এক্ষেত্রে। এমনকী রোগী অচেতন হতে পারে, খিঁচুনি হতে পারে বলে মন্তব্য তাঁর। তবে Naegleria সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশেরও বেশি। Acanthamoeba ক্ষেত্রে অসুখ তুলনামূলকভাবে দীর্ঘমেয়াদী হলেও তাতেও মৃত্যুর ঝুঁকি যথেষ্ট।
চিকিৎসা পদ্ধতি:
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ (পিডিটি), বিআইএনের চিকিৎসক জানিয়েছেন, আমাদের হাসপাতালে ১০ জন রোগীকে আমরা শনাক্ত করেছি। এই রোগের চিকিৎসায় তিনটি ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাম্য সেনগুপ্ত। সেগুলি হল – রিফ্যাম্পিসিন, ফ্লুকোনাজোল এবং ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথোক্সাজোল। চিকিৎসকের কথায়, এই তিন ওষুধ এই রোগ সারাতে দারুণ ভাবে কাজ করছে। প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী সেরে উঠেছেন বলে দাবি ডাক্তারবাবুর। যা আশার কথা। তবে এখনও পর্যন্ত ‘মস্তিষ্কখেকো’ অ্যামিবার কোনও নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক নেই বলে জানিয়েছেন সাম্য সেনগুপ্ত। ফলে দ্রুত রোগকে শনাক্ত করে তা চিকিৎসা করার পরামর্শ তাঁর।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
১. নিয়মিত ক্লোরিন দিয়ে সুইমিং পুল পরিষ্কার রাখা।
২. গরমকালে পুকুর বা নদীর জলে অযথা ডুব দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
৩. জলে নামলে নাকে জল না ঢুকতে দেওয়া, প্রয়োজনে নাক-ক্লিপ ব্যবহার করা।
৪. শিশুদের এমন জলে স্নান থেকে দূরে রাখতে হবে।
৫. যেকোনও অস্বাভাবিক মাথাব্যথা, জ্বর বা ঘাড় শক্ত হলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যাওয়া।
চিকিৎসকের কথায়, এটি মারণ সংক্রমণ। তবে আতঙ্ক তৈরি না করে সচেতনতা এবং প্রতিরোধের উপরেই জোর দেওয়ার কথা বলছেন সাম্য সেনগুপ্ত। শুধু তাই নয়, দ্রুত রোগ চিহ্নিত করে সঠিক ওষুধ খেলে প্রাণঘাতী অ্যামিবা সংক্রমণ থেকেও সুস্থ হওয়া সম্ভব বলেও মত তাঁর।