অসহায়তার সুযোগে

অসহায়তার সুযোগে

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


সন্তান হারানোর কষ্ট ছাপিয়ে ঘৃণা বড় হয়ে উঠেছে আরজি কর মেডিকেল কলেজে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের। একইসঙ্গে অবিশ্বাস। প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিচার- কোথাও যেন বিশ্বাসের লেশমাত্র নেই তাঁদের। হতভম্বও বটে তাঁরা। নিরুপায়, অসহায়। শুভেন্দু অধিকারীর ডাকা মিছিলে গিয়েছেন বলে কেউ কেউ সমালোচনায় বিদ্ধ করছেন তাঁদের। তাঁরাও কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করছেন। ফলে চর্চায় চলে আসছে রাজনীতির দাবা খেলায় তাঁরা কি বোড়ে হয়ে গেলেন?

প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক। আবার অবান্তরও। গত এক বছর ধরে আরজি করের হবু চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের বিচার নিয়ে উত্তাল হয়েছে বাংলা। অন্য রাজ্য, এমনকি ভিনদেশেও বিষয়টি আলোচনায় থেকেছে। আন্দোলন হোক, বিচার হোক- সবক্ষেত্রেই সামনে রাখা হয়েছে নির্যাতিতার বাবা-মাকে। যাঁদের মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। বুকে শোকের পাথর চাপা রয়েছে তাঁদের। গোটা সমাজ তাঁদের সন্তানের খুনের বিচার চাওয়ায় হয়তো কিছুটা আশ্বস্ত ছিল তাঁদের মন।

ভেবেছিলেন, তাঁদের মেয়ের ওপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিকার হবে। অপরাধের শাস্তি হবে। তদন্ত ও তারপর বিচার একজনকে দোষীসাব্যস্ত করে সাজাও দিয়েছে। কিন্তু সমাজের একাংশের মতো সন্তুষ্ট হননি নির্যাতিতার বাবা-মা। আরজি করের কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য দপ্তর, পুলিশের গোটা সিস্টেমটাকে ওই অপরাধের জন্য দায়ী বলে মনে করেন তাঁরা। একজনের শাস্তিতে তাই তাঁদের ক্ষোভের আগুন নেভেনি।

কিন্তু দিশা হারিয়ে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরজি কর আন্দোলনের ঝাঁঝ ফিকে হয়েছে। সংগঠিত প্রতিবাদ গতি হারিয়েছে। হারায়নি শুধু নির্যাতিতার বাবা-মায়ের শোক, ক্ষোভ। যা হয়তো কোনওদিন হারাবেও না। কেননা, ওই ঘটনার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী যে তাঁরাই। সেই কারণে কোথাও সামান্য আশার আলো দেখলে ছুটে গিয়েছেন। তাঁদের সেই মানসিক অবস্থার সুযোগ নিয়েছে অনেক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে রাজনৈতিক দলগুলির বোড়ে করে তোলা হয়েছে অসহায় দম্পতিকে।

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দম্পতির বাড়ি ছুটে গিয়ে প্রশাসনের ওপর থেকে ক্ষোভ সিবিআইয়ের দিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একজনের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর ফাঁসির দাবিতে আদালতে আর্জি জানিয়েছে রাজ্য সরকার। আইনের গেরোয় গোটা প্রক্রিয়া কিন্তু থমকেই আছে। সন্তানহারা দম্পতি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। সিবিআই অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করার পর তদন্তকারী সংস্থার ওপর আস্থা হারিয়েছেন।

নিষ্ফল আক্রোশে তাঁরা ছুটে গিয়েছিলেন নবান্ন অভিযানে। দলীয় পতাকা না থাকলেও অভিযান যে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর পরিচালনায় হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। তাঁর ছোঁয়া থাকায় বিজেপি ও তৃণমূলবিরোধী দলগুলি তো বটেই, চিকিৎসকদের সংগঠন, রাত দখলের উদ্যোক্তা ও অন্য প্রতিবাদকারীরা নবান্ন অভিযানের স্পর্শ গায়ে মাখতে চায়নি। এজন্য শুধু নির্যাতিতার বাবা-মায়ের নিন্দা করা নিরর্থক।

অসহায় দম্পতি নিরুপায়ের মতো তাঁদের পছন্দের বিচারের আশায় খড়কুটোর মতো যা পাচ্ছেন, সেটাই আঁকড়ে ধরছেন। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁদের কোণঠাসা করার সুযোগ তৈরি হয়ে গিয়েছে নির্যাতিতার বাবার অভয়া মঞ্চের প্রতি রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। সন্তানহারা দম্পতি চান বা না চান, রাজনীতি তাদের ভোটের দাবা খেলার বোড়ে বানাতে মরিয়া। সেই কাজে কোনও কোনও পক্ষ কিছুটা সফলও বটে।

সরকারপক্ষ নির্যাতিতার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিরোধিতা এড়ালেও গোটা বিষয়টি প্রচারের আড়ালে নিয়ে গিয়ে ভোটের রাজনীতিতে স্বস্তি কিনতে ব্যস্ত। অন্য দলগুলি আবার নির্যাতিতার বাবা-মাকে সামনে রেখে বিচারের দাবিকে কেন্দ্র করে শাসক শিবিরকে কোণঠাসা করার ছক কষে চলেছে। বিচারের চেয়েও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর বিষয়টিকে নিয়ে ভোটের ফায়দা তোলা। রাজনীতির এই খেলায় নির্যাতিতার বাবা-মা জড়িয়ে পড়েছেন নিরুপায় হয়ে। সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির নিষ্ঠুরতা বোধহয় একেই বলে।

The put up অসহায়তার সুযোগে appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *