অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: অভাব নিত্যসঙ্গী! ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। বাবা পথে পথে জামাকাপড় বিক্রি করেন। সংসারে তিন ভাই ও বোনের দায়িত্ব। সেখানে পড়াশোনা যেন বিলাসিতা! সেই কঠিন পরিস্থিতিকে সঙ্গী করে পায়ের শিকল ভাঙলেন হাওড়ার মহম্মদ সাজিদ হোসেন। উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম স্থান ছিনিয়ে এনে নজির গড়লেন তিনি। উর্দু মাধ্যমে তিনি রাজ্যে প্রথম। বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পর তাঁর বাব বললেন, “আমরা ওকে কোনওদিন পড়াশোনায় বাধা দিইনি। ও যত দূর পড়তে চায় পড়ুক। আমরা ওর পড়াশোনার জন্য সর্বদা সবরকমভাবে ওকে সাহায্য করব।”
হাওড়ার শিবপুরের পিএম বসতির বাসিন্দা মহম্মদ সাজিদ হোসেন। হাওড়া হাই স্কুলের ছাত্র তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগের ছাত্র। পরিবারে আর্থিক অনটন থাকায় প্রতিটি বিষয়ের আলাদা প্রাইভেট শিক্ষক পায়নি সাজিদ। একটি কোচিংয়ে গিয়েই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সাজিদের বাবা হকারি করেন। মা নূরজাহান গৃহবধূ। আর্থিক প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে উর্দুতে পেয়েছেন ৯৯, ইংরাজিতে ৯৩, অর্থনীতিতে ৯৬, ইতিহাসে ৯৮, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৯ ও ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে। বুধবার নিজের স্কুলে গিয়ে ফল জানার পর সাজিদ জানালো, দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছেন। তিনি জানিয়েছে, আইএএস হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও আপাতত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়েই পড়াশোনা করতে চান।
সাজিদের হাওড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফতাব আলম জানালেন, “সাজিদ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণীতে ওই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই প্রতিটি ক্লাসেই প্রথম হয়েছেন। ৬৫৬ পেয়ে মাধ্যমিকেও উর্দু মাধ্যম স্কুলের মধ্যে রাজ্যে প্রথম হয়েছিল সাজিদ। মাধ্যমিকের পর সাজিদ প্রথমে স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। পরে কলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন।”