রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: পাচারের (Wooden Smuggling) আগে রেলের পার্সেল ভ্যান থেকে বিপুল পরিমাণ বার্মা সেগুন কাঠ, গাঁজা ও সুপারি উদ্ধার করল নিউ জলপাইগুড়ি আরপিএফ (RPF) এবং জিআরপি (GRP)। বৃহস্পতিবার সকালে অসম থেকে গুজরাটগামী ওই ট্রেনটির পরপর কয়েকটি কামরা থেকে উদ্ধার হয় ২৪৪টি সেগুন কাঠের লগ। ঘটনার পর থেকে এলাকায় খোঁজ মেলেনি লোকোপাইলট ও ট্রেন ম্যানেজারের। এলাকায় রটে যায়, তাঁরা পালিয়ে গিয়েছেন। যদিও রাতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মা দাবি করেন, ‘রটে গিয়েছিল লোকোপাইলট এবং ট্রেন ম্যানেজার পালিয়ে গিয়েছেন। সেরকম কিছু হয়নি। ওঁরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। ট্রেনটি একটি বেসরকারি লজিস্টিক সংস্থা নিয়েছিল। রেলের এখানে কোনও যোগ নেই।’
রেলের এমন যুক্তিতে স্বাভাবিকভাবেই ধোঁয়াশা বাড়ছে। কেনই বা লোকোপাইলট এবং ট্রেন ম্যানেজার এলাকা ছাড়লেন সেই প্রশ্নও ঘুরছে সর্বত্র। ইতিমধ্যে গোটা ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ি জিআরপি এসআরপি কূঁয়রভূষণ সিং বলেছেন, গোটা রেকটাই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আমরা পুরো ঘটনার তদন্ত করে দেখছি।
একটা সময় ডুয়ার্সে ট্রেনে কাঠ পাচার হত হামেশাই। প্যাসেঞ্জার ট্রেনে সিটের নীচে মহামূল্যবান শাল, সেগুনের লগ রেখে চলে যেত পাচারকারীরা। মিশে যেত যাত্রীদের ভিড়ে। সুযোগ পেয়ে যাত্রাপথের নির্দিষ্ট জায়গায় ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলা হত সেই লগ। দিন বদলেছে, বন দপ্তরের কড়া নজরদারিতে ‘সুদিন’ ফুরিয়েছে কাঠ মাফিয়াদের। ফলে ট্রেন ছেড়ে অন্য পথে পাচার জারি রেখেছিল তারা। এদিনের ঘটনায় বোঝা গেল, ট্রেনে কাঠ পাচারের ঘটনা পুরোপুরি কমেনি। বরং এদিন যা ঘটেছে, তা আগে কখনও ঘটেনি। এত বিপুল পরিমাণ কাঠও আগে উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করছেন রেল ও বনকর্তাদের একাংশ।
এদিন সকালে এনজেপি স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে একটি পার্সেল ভ্যান এসে দাঁড়ায়। মুহূর্তের মধ্যে আরপিএফ আধিকারিকরা এসে তল্লাশি শুরু করেন গোটা ট্রেনে। ডাকা হয় জিআরপিকেও। কী হচ্ছে, তা প্রথমে বুঝতে পারছিলেন না স্টেশনে থাকা রেলকর্মী ও রেলযাত্রীরা। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা যায়, পার্সেল ভ্যানের একের পর এক কামরার সিল কাটা হচ্ছে। এরপর সেখান থেকে মোটা মোটা সেগুন কাঠের লগ বের করা আনা হয়। এত লগ ছিল যে সেগুলি নামাতে বাইরে থেকে শ্রমিক ডাকতে হয়। এভাবে প্রায় ১১টি বগি থেকে সেগুন কাঠের মোট ২৪৪টি লগ বের করে আরপিএফ ও জিআরপি।
এখানেই শেষ নয়। সেগুন কাঠের পাশাপাশি সাদা বস্তায় প্রচুর সুপারি উদ্ধার হয়। এই কাঠ এবং সুপারির কোনও বৈধ কাগজ মেলেনি বলে জানান পুলিশকর্তারা। কিছুক্ষণ বাদে অপর একটি বগি থেকে গাঁজাও উদ্ধার হয়।
সূত্রের খবর, রঙ্গিয়া ডিভিশনের আজরা স্টেশন থেকে ওই কাঠ মজুত করা হয়েছিল। ট্রেনটি গুজরাটের দিকে যাচ্ছিল। রেল দাবি করছে, একটি বেসরকারি লজিস্টিক সংস্থা ট্রেনটি ভাড়া করেছিল। সংস্থাটিই রঙ্গিয়া ডিভিশনের আজরা স্টেশন থেকে ওই কাঠ ট্রেনে তুলেছিল। ইতিমধ্যে রেলের তরফে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে এনজেপিতে রেল আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। তবে বিপুল পরিমাণ সুপারি এবং গাঁজা কোথা থেকে এল তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।