উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কোনও রকম অসুখবিসুখ ছাড়াই বেঁচে থাকতে কে না চায়! কিন্তু সবার পক্ষে আদৌ সেটা সম্ভব হয় না। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, আথ্রাইটিস না থাকলেও নিদেনপক্ষে গ্যাসের সমস্যা থাকবেই। মোদ্দা কথা, নীরোগ হয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছে সবার পূরণ হয় না। তবে নীরোগ হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন সঠিক খাদ্যাভ্যাসের (Weight loss plan) মাধ্যমে। সম্প্রতি নেচার মেডিিসন জার্নালে প্রকাশিত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা বেশ সাড়া ফেলেছে। সেই গবেষণা অনুযায়ী, খাদ্যতালিকায় যত বেশি সবজি, হোল গ্রেনস, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যোগ করবেন, বয়সের সঙ্গে তত সুস্থ থাকবেন। কোনও রোগ স্পর্শ করতে পারবে না।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ৩০ বছর ধরে প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা নিয়মিত খাদ্যতালিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পন্ন করেছেন। তাঁরা আট ধরনের খাদ্যতালিকাগত প্যাটার্ন কতটা মেনে চলেন তার ওপর ভিত্তি করে সমীক্ষকরা স্কোর দিয়েছেন। এই আট ধরনের ডায়াটরি প্যাটার্নের মধ্যে রয়েছে অল্টারনেটিভ হেলদি ইটিং ইনডেক্স (এএইচইআই), অল্টারনেটিভ মেডিটেরেনিয়ান ইনডেক্স, ডায়াটরি অ্যাপ্রোচেস টু স্টপ হাইপারটেনশন, মেডিটেরেনিয়ান-ড্যাশ ইন্টারভেনশন ফর নিউরোডিজেনারেটিভ ডিলে, হেলথফুল প্ল্যান্ট- বেসড ডায়েট, প্ল্যানেটরি হেলথ ডায়েট ইনডেস্ক, এম্পিরিক্যালি ইনফ্ল্যামাটরি ডায়াটরি প্যাটার্ন এবং এম্পিরিক্যাল ডায়াটরি ইনডেস্ক ফর হাইপারইনসুলিনেমিয়া। এরমধ্যে অন্যতম অল্টারনেটিভ হেলদি ইটিং ইনডেক্স (এএইচইআই)।
এই আট ধরনের ডায়েটই ফল, সবজি, হোল গ্রেনস, অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাট, বাদাম, শুঁটি জাতীয় খাবােরর ওপর বেশি জোর দেয়। কিছু ডায়েট আবার প্রাণীজ খাবার যেমন মাছ এবং নির্দিষ্ট কিছু দুগ্ধজাত খাবার পরিমিত মাত্রায় খেতে বলে। এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের আল্ট্রাপ্রোসেড খাবার গ্রহণও সমীক্ষকরা মূল্যায়ন করেছেন। দেখা গিয়েছে, যারা অল্টারনেটিভ হেলদি ইটিং ইনডেক্স মেনে চলেছেন, কোনও দীর্ঘস্থায়ী রোগ ছাড়া তাঁদের ৭০ বছর বয়সে পৌঁছানো এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা ৮৬ শতাংশেরও বেশি। এএইচইআই ডায়েটের মধ্যে রয়েছে ফল ও সবজি, হোল গ্রেনস যেমন গমের আটা, ওটমিল, ব্রাউন রাইস, কিয়োনা, পপকর্ন, বাদাম, শুঁটি জাতীয় খাবার, অ্যাভোকাডো, ডিম, মাছ এবং অলিভ অয়েল। এই ডায়েটে রেড মিট বা প্রসেসড মিট, চিনি জাতীয় পানীয় এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়া সীমিত রাখা হয়।
এই সমীক্ষায় আট ধরনের স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। সব কটারই উপকারিতা রয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকতে এএইচইআই সবথেকে বেশি কার্যকরী। যদিও মনট্রিল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যানি জুলি টিজারের বক্তব্য, সবার ডায়েট একই রকম হবে তেমনটা মোটেও নয়। প্রত্যেকের প্রয়োজন ও পছন্দ অনুসারে স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা উচিত। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক হু’র কথায়, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস কীভাবে বয়সের সঙ্গে স্বাধীন ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে এবং ভালো মানের জীবন উপভোগ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। সেইসঙ্গে ডায়াবিটিস, হৃদরোগ ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। তাই পরিমিত মাত্রায় প্রাণীজ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি বেশি করে উদ্ভিজ্জ খাবার খেলে বার্ধক্যেও সুস্থ থাকবেন।