Wacken Steel Battle | কুরুক্ষেত্রের আবহ তৈরি করে পঞ্চম স্থানে, ‘ওয়াকেন মেটালে’ বিশ্বমঞ্চে জয় রায়গঞ্জের অভিনবর

Wacken Steel Battle | কুরুক্ষেত্রের আবহ তৈরি করে পঞ্চম স্থানে, ‘ওয়াকেন মেটালে’ বিশ্বমঞ্চে জয় রায়গঞ্জের অভিনবর

ব্লগ/BLOG
Spread the love


তমোঘ্ন ব্রহ্ম, কলকাতা: ঠিক যেন বাংলার দুর্গাপুজো কিংবা বেনারসের দেব দীপাবলির পরিবেশ। নিজের শহরে যখন মেটাল ব্যান্ড তৈরি করে প্রথম পারফর্ম করেছিলেন, প্রেক্ষাগৃহের প্রায় ৯৫ শতাংশই ফাঁকা ছিল। জার্মানির ওয়াকেন মেটাল ব্যাটলে পয়লা অগাস্ট যখন গিটার কাঁধে মঞ্চে উঠছেন, তখন সামনে দর্শকদের উল্লাস দেখে প্রথমে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করাতে পারেননি। মনে হয়েছিল, এরকম তো আমাদের দুর্গাপুজোয় হয়।

তিনি অভিনব সিনহা। রায়গঞ্জ শহরে বাড়ি। দুর্গাপুজো না হোক, জার্মানির ওই মঞ্চ কিন্তু মুগ্ধ হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতিতে। ওই প্রতিযোগিতায়, কলকাতার যে ব্যান্ড ‘পঞ্চভূতা’র প্রতিনিধিত্ব করেছেন অভিনব, তাঁরা তুলে ধরেছিলেন মহাভারতের কাহিনী। যাতে শ্রোতারা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আবহ অনুভব করেছেন।

পয়লা অগাস্ট জার্মানিতে শেষ হয়েছে ‘ওয়াকেন মেটাল ব্যাটল’। জনপ্রিয়তার বিচারে যে প্রতিযোগিতাকে বলা হয় ‘দ্য মক্কা অফ মেটাল’। যাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিউজিক ফেস্টিভাল বললে বোধহয় অত্যুক্তি হয় না। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে অভিনবদের ব্যান্ড ‘পঞ্চভূতা’। যে নামেও ভারতীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া।

জার্মানি থেকে শনিবার ফোনে অভিনব জানালেন, পুরো বিষয়টা এখনও তাঁর কাছে খানিক স্বপ্নের মতো। এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে সব জায়গায় মানুষ একটা মিউজিক ফেস্টিভালকে নিয়ে যে এমন মেতে থাকতে পারেন, সেটা নাকি না দেখলে বিশ্বাস হয় না। দর্শকদের কী প্রতিক্রিয়া ছিল তাঁদের পারফরমেন্স দেখে?

অভিনবের কথায়, ‘৮৬ থেকে ৯০ হাজার দর্শক যে কেবল মুগ্ধ হয়ে মেটাল শুনতে পারেন, এটা আগে কখনও ভাবিনি। আমরা ‘এনশেন্ট ইন্ডিয়ান বৈদিক মেটালে’র মাধ্যমে মহাভারতকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। আমাদের পারফরমেন্স শুনে সকলে জানিয়েছেন, এক-এক সময়ে তাঁদের মনে হচ্ছিল যেন কুরুক্ষেত্রের মাঠে বসে রয়েছেন। আমাদের বড় পুরস্কার ওটাই।’

ওই প্রতিযোগিতায় তাঁর বড় প্রাপ্তি জন পেট্রোসি এবং স্ল্যাসকে সামনে থেকে শুনতে পারা, বলছিলেন তিনি। অভিনবর বাবা সরোজ সিনহা রায়গঞ্জ শহরের অন্যতম গুণী সংগীতশিল্পীদের একজন। ছোটবেলায় প্রথমে বাবার কাছে গান শেখা শুরু করলেও অচিরে অভিনব ভালোবেসে ফেলেন গিটারকে। এরপর রায়গঞ্জের স্বপন পালের কাছে গিটার শেখা শুরু। পরে শিখেছেন নীল কর্মকার, সৌরভ পাঁজা, বোধিসত্ত্ব ঘোষ এবং শুভরাজ ঘোষদের কাছে।

চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরুতে ‘ওয়াকেন মেটাল ব্যাটল’-এ প্রথম হওয়ায় অভিনবর ছাড়পত্র মিলেছিল জার্মানির এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের। যদিও রায়গঞ্জ থেকে জার্মানির যাত্রাপথটা সহজ ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে জার্মানি যাওয়ার ভিসা এবং টিকিটের বিপুল খরচ জোগানো বেশ কঠিন। সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছিলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। তাঁর আর্থিক সাহায্যে অভিনবর এই জার্নি সফল হয়েছে।

অভিনবর সাফল্যে আপ্লুত কৃষ্ণের কথায়, ‘বিশ্বের পঞ্চম স্থান ভারতের আর সেই সাফল্যে অভিনবর সঙ্গে নাম জড়িয়েছে রায়গঞ্জের। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে। ওঁর এই সাফল্য রায়গঞ্জের মুকুটে নতুন পালক জুড়ে দিল।’

অভিনব এখনও জার্মানিতে। ভারতে ফিরবেন চার তারিখ, তারপর খুব শীঘ্র যাবেন রায়গঞ্জের বাড়িতে। সেখানে তাঁর অপেক্ষায় রয়েছেন বাবা সরোজ, মা প্রতিভা এবং দাদা সপ্রতিভ। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানালেন, তাঁদের ব্যান্ড নিজেদের অ্যালবাম তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সেইসঙ্গে পরিকল্পনা রয়েছে দেশ-বিদেশে আরও বেশি অনুষ্ঠান করার।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *