অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: নয়া সন্ধিক্ষণের দোরগোড়ায় ভারতীয় ক্রিকেট! দিনকয়েক আগে রোহিত শর্মা আচমকাই টেস্ট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন। তার কয়েকদিনের মধ্যেই একই পথে হাঁটার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন বিরাট কোহলি।
২০২৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের পরই কুড়ির ক্রিকেট থেকে কোহলি-রোহিতরা অবসর নিয়েছিলেন। টেস্টের আঙিনাতেও অনেকটা একই সমীকরণ সামনে এসেছে আজ। জানা গিয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের কাছে ইংল্যান্ড সিরিজের আগেই টেস্ট থেকে অবসরের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন কোহলি। হিটম্যানের মতোই একদিনের ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিরাট।
সিদ্ধান্ত রাত পর্যন্ত তিনি চূড়ান্ত করেছেন বলে খবর সামনে আসেনি এখনও। কিন্তু পরিস্থিতি যা, কোহলি তাঁর অবসরের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে চলেছেন। টিম ইন্ডিয়ার বিলেত সফরে কোহলির যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিসিসিআইয়ের একটি বিশেষ সূত্রের দাবি, বিরাট ‘মানসিকভাবে’ তৈরি হয়েই এমন ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। উত্তরবঙ্গ সংবাদের তরফে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, রোহিতের টেস্ট ছাড়ার দিনই এমন পরিকল্পনার কথা সামনে আনতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদলে দিনকয়েক পরে সামনে এনেছেন টেস্ট থেকে তাঁর অবসর ভাবনা। বড় অঘটন না হলে রোহিতের পর কোহলিকে ছাড়াই ইংল্যান্ড টেস্টের দল ঘোষণা করতে চলেছেন অজিত আগরকাররা।
রোহিতের পর কেন বিরাটও একই পথে হাঁটতে চলেছেন? ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরে খোঁজ নিয়ে সামনে আসছে চমকপ্রদ তথ্য। জানা গিয়েছে, কোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণেই এমন পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত। রবিচন্দ্রন অশ্বীন আগেই সরে গিয়েছেন। এবার রোহিতের পর কোহলিও সেই পথে। ভিন্ন মতও রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের সময়ই সাজঘরে সতীর্থদের সামনে টেস্ট থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিরাট। কিন্তু তাঁর সতীর্থরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যাওয়া আইপিএলের আসরে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন কোহলি। তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছন্দ ফিরে এসেছে, এমনটাই ধরে নিয়েছিল ক্রিকেটমহল।
কিন্তু আজ পুরো ছবিটা একশো আশি ডিগ্রি বদলে গিয়েছে। ভারত-পাক যুদ্ধের সংঘর্ষ বিরতির রাতে কোহলিকে নিয়ে হইচই চলছে ভারতীয় ক্রিকেট সমাজে। বিসিসিআইয়ের তরফে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্যও কোহলির কাছে আবেদন গিয়েছে বলে খবর। আম্বাতি রায়াডুর মতো অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার বিরাটকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধও করেছেন। বোর্ডের এক শীর্ষকর্তা রাতের দিকে নাম না লেখার শর্তে উত্তরবঙ্গ সংবাদকে বলেছেন, ‘বিরাটের মধ্যে এখনও যথেষ্ট ক্রিকেট বাকি বলেই আমাদের বিশ্বাস। আর ফিটনেসের দিক থেকে কোহলির ধারেকাছে কেউ নেই। তাই ও ইংল্যান্ড সফরের আগে এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না করলেই ভালো।’
বিরাট নাকি জাতীয় দলের অধিনায়কত্বও ফিরে পেতে চেয়েছিলেন, এমন চমকপ্রদ তথ্যও আজ শোনা গিয়েছে। যদিও কোহলির ঘনিষ্ঠমহলের ইঙ্গিত, ‘ফেক নিউজ’। কোহলি টিম ইন্ডিয়ার নেতৃত্বে ফিরতে একেবারেই রাজি নন। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দলে রজত পাতিদারের নেতৃত্বে কোহলির খেলা। বিরাটের অবসরের ইচ্ছাপ্রকাশ নিয়ে অনেকেই বিস্মিত। বিসিসিআই কীভাবে কোহলির সঙ্গে আলোচনা করে, বিরাট তাঁর সিদ্ধান্ত বদলান কি না- এমন নানা বিষয়ের দিকে তাকিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটমহল। তাছাড়া রোহিতের পর কোহলিও ইংল্যান্ড সফরে না গেলে সম্ভাব্য নতুন অধিনায়ক শুভমান গিলের নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়ার টিআরপি রেটিং কমে যাবে অনেকটাই।
যদিও কোচ গম্ভীরের জমানায় সহজে বিরাট তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাবেন বলে মনে হয় না। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে, রোহিতের পর কোহলির টেস্ট থেকে অবসরের সিদ্ধান্তে সরকারি সিলমোহর পড়া এখন সময়ের অপেক্ষা।