উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল: দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজেদের প্রাণ দিয়ে লড়াই করে গিয়েছেন। এবার সেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরই দেওয়া হল ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা। এমনটাই লেখা ছিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar College) স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সিমেস্টারের প্রশ্নপত্রে। যা নিয়ে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
ইতিহাসের প্রশ্নপত্রটির ‘ক’ বিভাগের ১২ নম্বর প্রশ্নে লেখা ছিল, ‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কর, যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন।’ এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবাদে সরব হয়েছে জেলার শিক্ষামহল। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামীদের প্রতি এটি চরম অপমান বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
ওই প্রশ্নে ‘তিনজন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিটিশ আমলে মেদিনীপুরের তিন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ (১৯৩৩), পেডি (১৯৩১) এবং ডগলাস-এর নাম (১৯৩২)। ১৯৩১ সালে পেডিকে হত্যা করেন স্বাধীনতার সংগ্রামী বিমল দাশগুপ্ত এবং জ্যোতিজীবন ঘোষ। ডগলাসকে হত্যা করেন প্রভাংশুশেখর পাল ও প্রদ্যোৎকুমার ভট্টাচার্য। এরপর বার্জকে হত্যা করেছিলেন অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত ও রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী প্রমুখ। এদের মধ্যে প্রদ্যোৎ, রামকৃষ্ণ, নির্মলজীবন, ব্রজকিশোরের ফাঁসি হয়েছিল। বিমল, জ্যোতিজীবন, প্রভাংশুর কারাদণ্ড হয়েছিল। বার্জকে হত্যা করার পরে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহিদ হয়েছিলেন অনাথবন্ধু। পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মৃগেন্দ্রনাথ। আজও তাঁদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
কিন্তু তা ভুলে গিয়ে কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রশ্নে তাঁদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে চিহ্নিত করা হল সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এপ্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক নির্মল মাহাতো বলেছেন, ‘বাংলায় শব্দটি বন্ধনী বা ঊর্ধ্বকমার মধ্যে থাকার কথা। সেটা না দেওয়া থাকলে সেটা ছাপার ভুল।’ কিন্তু ‘সন্ত্রাসবাদী’ শব্দটি কেনই বা ব্যবহার করা হবে সেই ব্যাখ্যা তিনি দেননি। আবার ইংরেজিতে একই প্রশ্নপত্রে ‘জঙ্গি জাতীয়তাবাদী’ বলে উল্লেখ করা রয়েছে।