Uttar Dinajpur | হয়রানি রুখতে সহায়তা কেন্দ্র, হরিয়ানায় পুলিশি ‘নির্যাতনে’ বিধায়কের উদ্যোগ 

Uttar Dinajpur | হয়রানি রুখতে সহায়তা কেন্দ্র, হরিয়ানায় পুলিশি ‘নির্যাতনে’ বিধায়কের উদ্যোগ 

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


রণবীর দেব অধিকারী, ইটাহার: পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক যে ভিনরাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে হেনস্তার শিকার হওয়া বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানি ঘোচাতে এবার ইটাহারে (Itahar) বিশেষ সহায়তা কেন্দ্র খুলতে হল স্থানীয় বিধায়ক মোশারফ হুসেনকে। প্রায় প্রতিদিনই হরিয়ানায় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ইটাহারের বহু পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ, যখন-তখন পুলিশ এসে শ্রমিকদের মহল্লায় হানা দিচ্ছে, মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রচণ্ড মারধরও করা হচ্ছে। ভোটার, আধার সহ অন্যান্য নথি দেখালেও রেহাই মিলছে না। অনেক সময়, কিছুক্ষণ আটকে রাখার পর মুক্তি দিলেও তাদের এই রাজ্যে যে এলাকায় বাড়ি, সেখানকার থানা থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পেশ করতে বলা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে সেই পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট সংগ্রহের জন্যই থানায় থানায় ঘুরছেন পরিযায়ীদের আত্মীয়রা। কিন্তু সেই রিপোর্ট বা সার্টিফিকেটও মিলছে না। স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য, হরিয়ানার সংশ্লিষ্ট থানা থেকে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট চেয়ে কোনও বার্তা না এলে তা দেওয়া যাবে না। অগত্যা ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হুসেনের দ্বারস্থ হন ইটাহারের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিজনরা। পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্যই বুধবার থেকে ইটাহার পথসাথী বাসস্ট্যান্ডে তৃণমূল কার্যালয়ে ও বৈদড়া চেকপোস্টে দলের ব্লক কার্যালয়ে দুটি জরুরি সহায়তা কেন্দ্র চালু করলেন বিধায়ক।

ইটাহারের দুর্লভপুর অঞ্চলের আলঢান্ডা গ্রামের মহম্মদ নাজির বলেন, ‘আমার চার ছেলে পরিবার নিয়ে প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে হরিয়ানার গুরুগ্রামে চক্করপুর থানার অন্তর্গত সেক্টর-২৮-এ থাকছে। সেখানে ছেলেরা রাজমিস্ত্রির কাজ করে আর বৌমারা রান্নার ও পরিচারিকার কাজ করে। আমার চার ছেলেকেই সেখানকার পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে ছেড়ে দিলেও এখন ওরা এখানকার পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট চাইছে। তা না হলে আবার গ্রেপ্তার করবে বলেছে।’

গুলন্দর-২ অঞ্চলের ডাঙ্গি কুমেদপুরের বাসিন্দা নুরুল হাসান বলেন, ‘আমি দিনকয়েক আগেই হরিয়ানা থেকে বাড়িতে এসেছি। গুরুগ্রামে আমার অন্য আত্মীয়রা আছে। শুনলাম আজ ভোরে হঠাৎ আমাদের ভাড়াবাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছিল। ভোটার, আধার দেখালেও ওরা কোনও কথাই শুনছে না। এখানকার পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট চাইছে। কী যে করি!’

বিধায়ক তথা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সভাপতি মোশারফ হুসেন বলেন, ‘খুবই উদ্বেগজনক অবস্থা। স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের কখনও বাংলাদেশি, কখনও রোহিঙ্গা বাঙালি সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়ে অকথ্য অত্যাচার করছে হরিয়ানা পুলিশ। ভোটার-আধার নয়, ওরা আমাদের থানা থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট চাইছে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলেই আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি অত্যন্ত মানবিকভাবে বিষয়টি দেখছেন।’

বিধায়ক জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরেই তড়িঘড়ি কলকাতা থেকে ইটাহারে ফিরে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজ নিজে ইটাহার থানায় গিয়ে আইসির সঙ্গে কথা বলেছি যাতে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কোনও সমস্যা না হয়। পাশপাশি এমএলএ সার্টিফিকেট প্রদান ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড়ের ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিক ভাইদের সহযোগিতার জন্য ইটাহার ও বৈদড়া চেকপোস্টে দুটি সহায়তা কেন্দ্র খুলেছি।’

উত্তর দিনাজপুরে (Uttar Dinajpur) সরকারিভাবে রেজিস্টার্ড পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১ লক্ষ ১১ হাজার। বেসরকারি হিসেবে সেই সংখ্যা দেড় লক্ষেরও বেশি। এর মধ্যে ইটাহার, করণদিঘি, গোয়ালপোখরের মতো ব্লকগুলি থেকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান। হরিয়ানার গুরুগ্রামে ইটাহারের কয়েকশো মানুষ বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরাই এখন পুলিশি হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *