দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: মঙ্গলবার সকালে উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinajpur) আলতাপুরের বেলদহি গ্রামের বাসিন্দা বিলাসু সিংহ নিজের বাড়িতে মাটি কাটতে গিয়ে বাঁশের এক চুঙ্গি উদ্ধার করেন। তার ভেতরে পাওয়া গিয়েছে প্রাচীন কাইথি লিপিতে লেখা জমির দস্তাবেজ। বিহারের পুরোনো জমি সম্পর্কিত এবং অন্য সরকারি নথিপত্র কাইথি লিপিতে লেখা হত। বর্তমানে এই লিপি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
বিলুপ্তপ্রায় লিপি উদ্ধার হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন গ্রেটার কোচবিহার কমিটির উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোহনলাল সিংহ। তিনি বলেন, ‘টুঙ্গিদিঘির বিভিন্ন এলাকা আগে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই এখানকার পুরোনো জমি সংক্রান্ত এবং অন্য সরকারি নথিপত্র কাইথি লিপিতে লেখা। সেই সময় সাধারণ মানুষ এই লিপি ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন খুব কম লোকই পড়তে পারেন এই লিপি। আজ যে সমস্ত লিখিত নথিপত্র বাঁশের চুঙ্গিতে মিলেছে সেগুলো যে দলিল, বোঝা গিয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা রাজবংশী সংগ্রহশালা তৈরি করলে সেখানে এই দলিল সংরক্ষণ করা হবে।’
বিশিষ্ট পুরাতাত্ত্বিক ডঃ বৃন্দাবন ঘোষ জানান, ‘কাইথি একটি পুরোনো লিপি যা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহার হত। ভোজপুরি, মৈথিলি সহ একাধিক ইন্দো-আর্য ভাষা লেখা হত কাইথি লিপিতে। আইন, প্রশাসন, দলিল, খতিয়ান ও ব্যক্তিগত নথির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সূর্যাপুর পরগনায় আগে জমির দলিল, খাজনার রসিদ কাইথি লিপিতেই লেখা হত। ইসলামপুর মহকুমায় বহু বাড়িতে, বিশেষত দলিল লেখক এবং জোতদারদের বাড়িতে এখনও এই লিপি পাওয়া যায়। কর্ণজোড়া মিউজিয়ামে এই লিপিতে লেখা বিভিন্ন দস্তাবেজ আছে। এর সংরক্ষণ প্রয়োজন।’
হিস্টোরিক্যাল সোসাইটি অফ উত্তর দিনাজপুর সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সিং জানান, বিভিন্ন নথিপত্র দেখে জানা যায়, ১৮৮০ নাগাদ ব্রিটিশ শাসনে কাইথি লিপি বিহারের আইন-আদালতের কাজে স্বীকৃত ছিল। বিহারের কাটিহার, পূর্ণিয়া, কিশনগঞ্জ জেলার পাশাপাশি ইসলামপুর মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে কাইথি লিপির দলিল দস্তাবেজ এখনও মেলে।
উত্তর দিনাজপুর জেলার রাজবংশী সামাজিক সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটি বেসরকারিভাবে টুঙ্গিদিঘিতে রাজবংশী সংস্কৃতির মিউজিয়াম তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে গ্রেটার কোচবিহার, রাজবংশী গাভুর সংঘ, বিশ্ব রাজবংশী উন্নয়ন মঞ্চ সহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন যুক্ত আছে।
সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মোহনলাল সিংহ বলেন, ‘রাজবংশী ভাষার কবি সাহিত্যিকদের বিভিন্ন বইপত্র, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, প্রাচীনকালে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস, মূর্তি, ছবি এই সংগ্রহশালায় স্থান পাবে। গত সপ্তাহে সমন্বয় কমিটির সদস্যরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী বছরের শুরুতে মিউজিয়ামের কাজ শুরু হবে।’