বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: উত্তর দিনাজপুর (Uttar Dinajpur) জেলার বাংলাদেশ সীমান্তে সক্রিয় জাল নোট পাচারের সিন্ডিকেট। তারা জাল নোট ছড়াতে এপারের গ্রামীণ দোকানের হালখাতা, মেলা, হাট আর বাজারকে টার্গেট করেছে। যেখানে ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মহিলাদের।
সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংস্রব রয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর’ এবং মালদহে কিছু হাট, বাজার সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম রয়েছে। হাটবাজারের ব্যবসায়ীরা সহজ সরল। তাঁদের সঙ্গে লেনদেন করা সহজ। সম্ভবত এজন্যই জাল নোট ছড়াতে হাট ও গ্রামীণ বাজারকে টার্গেট করেছে সিন্ডিকেট। আর ওই কাজে লাগানো হচ্ছে মহিলাদের।
গোয়েন্দাদের দাবি, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে চোরাপথে মালদহ (Malda), মুর্শিদাবাদ হয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলায় জাল নোট ঢোকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বারবার অভিযান চালালেও কাঁটাতারের ওপারে জঙ্গিগোষ্ঠীর একাংশের মদতে এই কারবার উত্তরের মাটিতে স্থায়ী করতে কিছু এজেন্ট মরিয়া চেষ্টা চলাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে সাফল্যও পেয়েছে। তবে তা পুরোপুরি রুখতে পারছে না।
গোয়েন্দাদের দাবি, একটু ভালো করে লক্ষ করলে নকল নোট সহজেই চিহ্নিত করা যায়। গ্রামগঞ্জের হাটেবাজার এই নোট চালিয়ে দিচ্ছে জাল নোটের কারবারিরা। উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন বাজারেও এমন নোট ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মালদহ থেকে এই নোটের কারবারিরা তাদের চক্রের সদস্যদের শিলিগুড়ির একাধিক এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে থাকার নির্দেশও দিয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় জাল নোট কারবারিদের গতিবিধির উপর নজরদারি বাড়িয়েছে এসটিএফ ও গোয়েন্দা পুলিশ।
১৫ ফেব্রুয়ারি গোপন সূত্রে খবরের ভিত্তিতে এইচডিএফির আধিকারিক উত্তম শর্মার নেতৃত্বে পানিশালা এলাকা থেকে এক মহিলা সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকার ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের প্রত্যেকের বাড়ি মালদা জেলার বৈষ্ণবনগর থানার আব্দুলপুর সংলগ্ন মোহনপুর গ্রামে। তবে কীভাবে ওই জাল নোটগুলি আসল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে এসটিএফ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সমস্ত দিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জাল নোটের কারবার রুখতে নজরদারি বাড়িয়েছে জেলা পুলিশ।
জাল নোট পাচারের নির্বিঘ্ন রুট ছিল মালদার লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা। এমনকি এই ধরনের জাল নোট পাচার আটকাতে মালদায় এসটিএফের আলাদা দপ্তর তৈরি হয়েছে। কিছুদিন আগেই এসটিএফের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিনীত গোয়েল মালদায় ঘুরে গেলেন সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতির বিস্তারিত খেঁাজখবর নিতে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, মালদায় নিরাপত্তার এই কড়াকড়ি দেখে এবার উত্তর দিনাজপুরকে নতুন রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা।