বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: উত্তর দিনাজপুরে (Uttar Dinajpur) রায়গঞ্জ (Raiganj) ও ইটাহারে (Itahar) এটিএম লুটের ঘটনায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের যোগ মিলল। সোমবার রায়গঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে ধৃতদের টিআই (টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন) প্যারেড হয়। পাশাপাশি ধৃতদের টিআই প্যারেডের ছবি এদিন আদালতেও পেশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের রায়গঞ্জ জেলা আদালতের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সেশন জজ কোর্টে তোলা হবে।
এটিএম লুট কাণ্ডে ধৃতদের মধ্যে সফিকুল মণ্ডল নামে এক দুষ্কৃতীর বাড়ি বাংলাদেশে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশি জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন, কেবল তিনিই নয়, ধৃতদের মধ্যে আরও তিনজন দুষ্কৃতী রয়েছে যাদের বাড়ি বাংলাদেশে। তাদের কাছ থেকে ভারতীয় ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও প্যান কার্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশি পরিচয়পত্র সহ একাধিক নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
উত্তর দিনাজপুর জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘ধৃতরা কেউ রাজস্থান, কেউ বিহার বা উত্তরপ্রদেশের পরিচয়পত্র জোগাড় করলেও, আসলে তাদের বাড়ি বাংলাদেশে। সেই কারণেই ফরেন অ্যাক্টে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাদের আদালতে তোলা হবে।’
চলতি বছরের ৭ মার্চ রায়গঞ্জ ও ইটাহার থানা এলাকায় গভীর রাতে গ্যাস কাটার দিয়ে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এটিএম কেটে প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকা লুট করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তরফে পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করার পর তদন্তে নেমে রায়গঞ্জ ও ইটাহার থানার পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্তরা একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করত। এটিএম বসানোর কাজেও তারা পারদর্শী। এমনকি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তারা এটিএম বসানোর কাজেই নিযুক্ত ছিল। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই তারা একাধিক এটিএম লুটের অপরাধ সংঘটিত করে। রায়গঞ্জ ও ইটাহারের লুট হওয়া এটিএমের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে। পশ্চিমবঙ্গের আরও কয়েকটি এটিএম লুটের ঘটনাতেও তাদের যোগ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ধৃত ছয় দুষ্কৃতীর মধ্যে মামুন হোসেন ও সফিকুল মণ্ডল পুলিশকে তাদের ঠিকানা জানিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারী থানা এলাকার দুই গ্রামে। অন্যদিকে, বাকি চার দুষ্কৃতীর মধ্যে নরেশ ওরফে রাহুল ও জব্বির বাড়ি হরিয়ানায়, ইরফান খানের বাড়ি রাজস্থানের তিজারা থানা এলাকায় ও কৃষাণ উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। ধৃতরা সকলে ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখালেও এদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি নাগরিক বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। যদিও সফিকুল ছাড়া আর কোন তিনজনের বাড়ি বাংলাদেশে তা এদিন স্পষ্ট করেনি পুলিশ। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত নথিগুলি যাচাইয়ের জন্য বিদেশমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ৬ দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩০৫/১১১ ধারার পাশাপাশি ফরেন অ্যাক্টে মামলা রুজু করা হয়েছে।