Uttar Banga Sambad | খবর নাও, খাবার দাও…, উত্তরবঙ্গ সংবাদের বিনিময়ে জীবন সংগ্রাম সবিতার

Uttar Banga Sambad | খবর নাও, খাবার দাও…, উত্তরবঙ্গ সংবাদের বিনিময়ে জীবন সংগ্রাম সবিতার

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


রূপক সরকার, বালুরঘাট: খেঁজুর ব দ অ অ অ ল… বলে গ্রামগঞ্জে আর হাঁক শোনা যায় না। অথচ একসময় এই হাঁক শুনেই ভরদুপুরে বাড়ি থেকে একবাটি ধান বা গম নিয়ে দৌড়ে আসত ছোট ছেলেমেয়েরা। সেই ধানের বিনিময়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে খেজুর কিনে খেত তারা। সেই দিন আজ অতীত। কাট টু ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’। কী আশ্চর্য! সেই প্রাচীন বিনিময় প্রথা আজও টিকিয়ে রেখেছেন বালুরঘাটের সবিতা বর্মন। দু‘বেলা তিনি পেটের আহার জোগাড় করছেন এই বিনিময় প্রথার মাধ্যমেই। তাঁর বিনিময়ের পণ্য সংবাদপত্র।

সবিতাকে একডাকেই চেনে গোটা বালুরঘাট শহর। কিঞ্চিৎ মানসিক ভারসাম্যহীন। ঠিকঠাক কথাও বলতে পারেন না। তিনকুলে স্বজন বলতে মা ও এক মাসি। এমন তরুণীর ভিখিরি হওয়াই ভবিতব্য হতে পারত। কিন্তু ভিখিরির জীবন পছন্দ নয় সবিতার। মানুষের কাছে হাত পেতে জীবন চালাতে নারাজ তিনি। তাহলে জীবন চলবে কী করে? কাজ করার ক্ষমতাও যে তেমন নেই! অবশেষে নিজের পথ নিজেই বেছে নেন বিশেষভাবে সক্ষম এই তরুণী। রোজ গোটা কতক ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ নিয়ে হাজির হন শহরের বিভিন্ন দোকানদার ও বাসিন্দাদের বাড়িতে। সংবাদপত্রের দাম হিসেবে কেউ নগদ টাকা দিতে চাইলে সটান ‘না’ বলে দেন সবিতা। একহাতে বাড়িয়ে দেন উত্তরবঙ্গ সংবাদ, অন্যহাতে গ্রহণ করেন খাদ্যদ্রব্য। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই বালুরঘাটের আমতলিতে বৃদ্ধা মাসির আশ্রয়ে থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন হিলির বাবুপাড়ার বাসিন্দা সবিতা বর্মন।

এই শীতেও প্রতিদিন সকাল হলেই ঘুম থেকে উঠে তিনি পায়ে হেঁটে চলে আসেন বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ডে। সংবাদপত্র বিক্রেতার দোকান থেকে টাকা দিয়েই কেনেন ১০-১৫ টি উত্তরবঙ্গ সংবাদ। এরপর সেই পেপার বিভিন্ন বাজারে, রাস্তায় বিক্রি করেন তিনি। বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে খাবার বা অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করেন।

বালুরঘাটের সংবাদপত্র বিক্রেতা মাধব মৈত্র বলেন, ‘সবিতা আমাকে কাকা বলে ডাকে। প্রতিদিন সকালে টাকা দিয়েই আমার কাছ থেকে উত্তরবঙ্গ সংবাদ পেপার কেনে। কিছুটা কম দামেই ওকে ১০-১৫ টা পেপার দিয়ে দিই। সেই পেপার বিক্রি করেই সে রোজকার খাবার সংগ্রহ করে।তাকে দেখে সত্যিই আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।’

দীর্ঘদিন ধরে সবিতাকে দেখছেন বালুরঘাটের বাসিন্দা বিপ্লবকুমার চন্দ। তাঁর কথায়, ‘যেভাবে ও নিজে সুস্থ না হয়েও কাজ করে উপার্জন করার মানসিকতা রাখে, সেটাই আমাদের অনুপ্রেরণা।’

যাঁরা রোজ তাঁর কাছ থেকে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ সংবাদ নেন তাঁরাও সবিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যেমন বালুঘাট বড়বাজারের সবজি ব্যবসায়ী নিখিল কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘সবিতা সকালবেলা পেপার নিয়ে দোকানে চলে আসে। তবে পেপারের দাম হিসেবে টাকা দিতে চাইলে তা নিতে চায় না। তার বদলে সবজি দিতে বলে। আমি আমার সাধ্যমতো তাকে সবজিই দিই।’

বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকার শাঁখা ব্যবসায়ী মিলন মালাকার জানান, ‘পেপারের বদলে সে আমাকে তেল, লবণ, চাল, ডাল কিনে দিতে বলে। আবার কখনও খাওয়ানোর জন্যও বলে। যেদিন যা দাবি করে, ওকে সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করি।’

কিন্তু বিনিময়ের পণ্য হিসেবে ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’কেই কেন বেছে নিলেন সবিতা? এর যথার্থ ব্যাখ্যা অবশ্য তাঁর জানা নেই। তবে পাশ থেকে ফুট কেটে এক বাসিন্দা বললেন, ‘হয়তো তাঁর কাছে সকলে ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ই চান। তাই এই সংবাদপত্রকেই তাঁর সবেচেয়ে সহজ ও ভালো বিনিময়যোগ্য পণ্য বলে মনে হয়েছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *