সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বন্যাবিধ্বস্ত পাকিস্তান। কার্যত গোটা দেশ চলে গিয়েছে জলের নিচে। গুরুতর এই অবস্থায় পাকিস্তানে বিমান বোঝাই করে ‘সাহায্য’ পাঠাল আমেরিকা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই সাহায্যকারী বিমান অবতরণ করেছে অপারেশন সিঁদুরে গুঁড়িয়ে যাওয়া সেই নূর খান বায়ুসেনা ঘাঁটিতে। সম্প্রতি যা সারাই করেছে পাক সেনা।
শুক্রবার এই মার্কিন সাহায্য প্রসঙ্গে এক বিবৃতি জারি করা হয়েছে ইসলামাবাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের তরফে। যেখানে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমেরিকার কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিল পাকিস্তান। সেইমতো শুক্রবার রাওয়ালপিন্ডির নূর খান ঘাঁটিতে ত্রাণ সামগ্রী-সহ অবতরণ করেছে। শুধু তাই নয় জানা গিয়েছে, মার্কিন সেনার মোট ৬টি বিমান পাকিস্তানকে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাবে। ত্রাণের তালিকায় থাকবে তাঁবু, ওয়াটার পিউরিফায়ার, জেনারেটর ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস। শুক্রবার প্রথম দফায় পাকিস্তান সেনার হাতে পাঠানো হয়েছে সেই সাহায্য।
U.S. army plane delivered important provides on the request of the Pakistan army in response to the devastating floods. At Nur Khan Air Base, CDA Baker prolonged her deepest condolences to the folks of Pakistan, whose lives have been uprooted by the widespread,… pic.twitter.com/60XFcQjShO
— U.S. Embassy Islamabad (@usembislamabad) September 6, 2025
তবে এই সাহায্যের নেপথ্যে অন্য ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও এড়িয়ে যাচ্ছে না কূটনৈতিক মহল। সাম্প্রতিক চিন-ভারত ঘনিষ্ঠতা পাকিস্তানের কাছে খুব একটা মঙ্গলজনক নয়। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আমেরিকার কপালে। এই অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাক সেনা প্রধান আসিফ মুনির ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও শুল্কচুক্তি করা হয়েছে। এরপর এই সাহায্য নিছক মানবিক সাহায্য না কি এর আড়ালে ‘যুদ্ধোন্মাদ’ পাকিস্তানকে অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তি পাঠানোর সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাচ্ছে না ওয়াকিবহাল মহল। বিশেষ করে নূর খান ঘাঁটিতে ত্রাণের বিমান অবতরণ সে সন্দেহকে জোরালো করছে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বায়ুসেনা ঘাঁটি এই নূর খান। এই ঘাঁটি ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ২৫ কিমি দূরেই অবস্থিত। ফলে রণকৌশলগত দিক থেকেও এই পাক বায়ুসেনা ঘাঁটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশন সিঁদুরের পরবর্তীতে সেই ঘাঁটিকেই টার্গেট করে ভারত। ব্রহ্মস মিসাইলে গুঁড়িয়ে যায় পাক বায়ুসেনার ‘মেরুদণ্ড’। হামলা পরবর্তীতে যে স্যাটেলাইট ছবি সামনে আসে, তাতে স্পষ্ট দেখা যায় যে নূর খান এয়ারবেসের রানওয়েতে বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে। এমনকী আশেপাশের একাধিক বাড়িতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সদ্য সেই ঘাঁটি মেরামত করেছে পাক সেনা।
উল্লেখ্য, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভয়াবহ বৃষ্টির কবলে পড়েছে পাকিস্তান। যার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গত ৪০ বছরের মধ্যে এত ভয়াবহ বন্যা পাকিস্তানে দেখা যায়নি। অজস্র গ্রাম চলে গিয়েছে জলের নিচে। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাঞ্জাবের সম্প্রচার মন্ত্রী আজাম বুখারি বলেন, “শুধু পাঞ্জাবে ভয়াবহ বন্যার জেরে প্রভাবিত হয়েছেন ২০ লক্ষের বেশি মানুষ।” সিন্ধুর শাখা নদী চন্দ্রভাগা, ইরাবতী ভাসিয়ে দিয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক হাজার মানুষের। দুর্যোগের জেরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে খাইবার পাখতুনখোয়ায়। শুধুমাত্র এই প্রদেশে হড়পা বান ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪০৬ জনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন