গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: আজ দশমী। বিষাদের মাঝেও যেন মিলনের সুর ইছামতীর বুকে। বিজয়ার ভাসানে ইছামতীতে ভাসবে দুই বাংলার নৌকা। জল সীমানা না পেরিয়েই ইছামতীর বুকে মিলবে দুই বাংলা। ১০ বছর আগে দুই বাংলার মিলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, আগেই ইছামতীর ভাসানের জৌলুস হারিয়েছিল। ইছামতীর ভাসানের রং হয়েছিল ফ্যাকাসে। একদিকে অবৈধ অনুপ্রবেশ, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে বন্ধ হয়ে যায় দুই দেশের মিলনক্ষেত্র ইছামতীর বুকে দুই বাংলার একসঙ্গে প্রতিমা নিরঞ্জন। তারপর থেকে প্রতি বছরই সীমান্ত রেখা মেনে বিসর্জন হয় দুই দেশে।
ওপারের নৌকা নামে ওপারে। আর এপারের নৌকা এপারে। সীমানা লঙ্ঘন করে না কেউই। এবারও বসিরহাটের টাকিতে ইছামতীর বুকে ভারত-বাংলাদেশের বিসর্জন নিয়ে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী ও প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে ইছামতী নদীবক্ষে বৈঠক হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আধিকারিকদের পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আধিকারিকরা, টাকি পুরসভার পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, উপ পুরপ্রধান ফারুক গাজী, হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আমিরুল ইসলাম, হাসনাবাদের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অলিম্পিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, হাসনাবাদের এসডিপিও ও হাসনাবাদ থানার আইসি গোপাল বিশ্বাস-সহ বিএসএফ আধিকারিকরা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনও প্রভাব যাতে উৎসবে না পড়ে। সেজন্য দু’দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হবে। সীমান্তরেখা মেনে মিলবে দুই বাংলা। ইছামতীর মাঝ বরাবর সীমানায় থাকবে বিএসএফ ও ওপারে বিজিবি। সেই মতোই ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিসর্জনের উৎসব চলাকালীন স্পিডবোর্ড নিয়ে টহল দেবে বিএসএফ এবং বিজিবি। পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওপারে বাংলাদেশের নৌকা, এপারে ভারতের নৌকা থাকবে। কোনও দেশের নৌকা সীমানার পার হতে পারবে না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইছামতীতে নিরঞ্জন চলবে। ড্রোন উড়িয়ে বাইনোকুলারের সঙ্গে সিসি ক্যামেরায় নজর দারি চালাবে বিএসএফ।’’

দর্শনার্থী ও পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য এবছর মোটরচালিত ১৫০টি নৌকা থাকছে। সেখানে ১২ থেকে ২০ জন ওঠার অনুমতি পাবে। আর দাঁড়বাহী নৌকায় উঠতে পারবে ৫ থেকে ৭ জন। এছাড়াও টাকি পুরসভার উদ্যোগে রাখা হয়েছে বাজি প্রদর্শন। কয়েক বছর হাসনাবাদ থেকে টাকিতে নৌকা ঢুকতে দেওয়া হত না। এবার হাসনাবাদের মানুষ অনায়াসেই জলপথে টাকিতে প্রবেশ করতে পারবে বলে খবর। এছাড়াও দুই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আঁটোসাঁটো থাকবে বলে জানিয়েছেন বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ডঃ হোসেন মেহেদি রহমান। তিনি বলেন, “টাকিতে যেহেতু আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে, প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক বিসর্জন দেখতে ভিড় জমান। কলকাতা ও তার পার্শবর্তী এলাকা থেকে মানুষ আসেন তা অত্যন্ত ভয়ের। তাই সূর্যাস্তের আগেই ভাসান সম্পন্ন করতে হবে বলে প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর, স্থানীয় থানার পুলিশ।”
শুধু টাকিতে নয়, এবছর শুক্রবার বসিরহাট পুরসভা এলাকাতেও ইছামতীর ভাসান রয়েছে। এসপি জানান, “প্রত্যেক বছরই বিপুল মানুষের সমাগম হয়। ইছামতীর বুকে নামে তিনশোর বেশি নৌকা। মানুষের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখে এখানেও কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোতায়ন আছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তৈরি পুলিশ-প্রশাসনও।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন