Tufanganj | মুদির দোকান যেন মানবিকতার পাঠশালা

Tufanganj | মুদির দোকান যেন মানবিকতার পাঠশালা

শিক্ষা
Spread the love


গৌতম দাস, তুফানগঞ্জ: ‘গ্রামের প্রসন্ন গুরুমহাশয় বাড়িতে একখানা মুদির দোকান করিতেন। দোকানেরই পাশে তাঁহার পাঠশালা। বেত ছাড়া পাঠশালায় শিক্ষাদানের বিশেষ উপকরণ-বাহুল্য ছিল না।’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’-র এই অংশ যেন কোথাও তখনকার এক জীবন্ত দলিলও বটে। তৎকালীন সময়ে অনেকেই এভাবে মুদির দোকানের মধ্যেই পাঠশালা চালাতেন আর সেখানে শিক্ষালাভ করত অপুর মতো অনেক পড়ুয়া।

এরকমই এক পাঠশালা রয়েছে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের (Tufanganj) ভানুকুমারী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাগলারহাট এলাকায়। তবে, এই পাঠশালায় শিক্ষাদানের মূল উদ্দেশ্য মানুষের মঙ্গলে সকলকে উৎসাহিত করা। ওই এলাকার ৭৩ বছরের বিমলচন্দ্র সরকার ওই দোকানের মালিক এবং সেইসঙ্গে এই ‘পাঠশালার’ শিক্ষকও বটে। তিনি এলাকার সকলের কাছেই দাদু বলেই পরিচিত। আর তাঁর দোকানের নামেও যতই থাকুক ‘জয়গুরু ভাণ্ডার’, সেটা সকলের কাছে ‘দাদুর দোকান’। এই দোকানের সাইনবোর্ডের ওপরে লেখা রয়েছে, ‘মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবা’। আর পুরো দোকানজুড়ে সাঁটানো রয়েছে ইংরেজি, বাংলায় নানা ধরনের  মূল্যবোধের বাণী। দীর্ঘ ৩২ বছরের পুরোনো এই দোকানের প্রতি এলাকার সকলেরই একটু আলাদা অনুভূতি রয়েছে।

বিমল বলেন, ‘আমি প্রকৃত মানুষ গড়ার শিক্ষা দিয়ে থাকি। দোকানদারি  আমার পেশা হলেও, নেশা কিন্তু মানুষকে ভালোবাসা। তাই ঠাকুরের একটি কথা সবসময় বলে থাকি, মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর।’

বক্সিরহাট হাইস্কুল থেকে তৎকালীন সময়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাবা মারা যাওয়ায় আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি বিমল। অল্প পড়াশোনা সত্ত্বেও তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে বহু ধর্মীয় বাণী লিখেছেন। এখনও সমানতালে লিখে চলেছেন। দোকানের ফাঁকে খদ্দেরের চাপ কমলেই চলে তাঁর কলম। যদিও সেই ফুরসত তাঁর খুব কমই মেলে। কারণ দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চে সবসময়েই যে বসে থাকে তাঁর ‘শিক্ষার্থীরা’। যাদের মূল আকর্ষণ দাদুর কাছে ভালো মনের মানুষ হতে শেখা। আর বেচাকেনার সঙ্গে সমানতালে চলে সেই শিক্ষাদানের কাজও। আর এভাবেই কেটে যায় সকাল থেকে সন্ধে। দিন-দিন খদ্দের বা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলে।

স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল সরকার বলেন, ‘দাদুর দোকান যেন ধর্মীয় পাঠশালা। এই দোকান থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে গেলে অনেক কিছুই শেখা হয়। জীবনের ভুল পদক্ষেপগুলো শুধরে নেওয়া যায়। অনেক কিছু শিখেছি।’  আরেক স্থানীয় অমরচন্দ্র সাহার কথায়, ‘বিমলচন্দ্র সরকার সকলের দাদু হিসেবেই পরিচিত। তিনি তাঁর ছোট্ট দোকানে মানুষ গড়ার শিক্ষাও দিয়েও থাকেন। অনেকেই দাদুর ছত্রছায়ায় এসে তাদের জীবন শোধরাতে পেরেছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *