Tufanganj | নৌকায় ‘ভেসে রয়েছেন’ কারিগর মজিবররা

Tufanganj | নৌকায় ‘ভেসে রয়েছেন’ কারিগর মজিবররা

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


তুফানগঞ্জ: ‘সন্ধ্যার সময় জাহাজঘাটে দাঁড়াইলে দেখা যায় নদীর বুকে শত শত আলো অনির্বাণ জোনাকির মতো ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। জেলে নৌকার আলো ওগুলি।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসটি আজও মনে করিয়ে দেয় বর্ষার মরশুমে জেলেপাড়ার সেই ব্যস্ততা।

আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ শেষ। বর্ষা শিয়রে। তুফানগঞ্জে জোরকদমে শুরু হয়েছে নতুন নৌকা তৈরি ও পুরোনো নৌকা সারাইয়ের কাজ। জেলেদের চাহিদা মেটাতে এখন দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। সোমবার তুফানগঞ্জ মহকুমার একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় ধরা পড়ল সেরকম চিত্র। দুপুরের প্রখর রোদকে উপেক্ষা করে নৌকা সারাইয়ের কাজ করছেন কাঠমিস্ত্রিরা। একই সঙ্গে নতুন নৌকা তৈরির কাজও চলছে।

বর্ষায় রায়ডাক, গদাধর, কালজানি সহ বিভিন্ন নদীর জলস্তর বেড়ে যায়। আর এই সময় জেলেদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। টানা দু’মাস দিন ও রাতে নদীতে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে বেরোন তাঁরা। বর্ষায় নদী তীরবর্তী জমিতে জল ঢুকে যায়। জলাজমিতে শাপলা হয়। শাপলা তুলতে চাষিদের ছোট নৌকার প্রয়োজন হয়। তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রায়ডাক নদীর জালধোয়া সেতু না হওয়ায় পারাপারের কাজেও নৌকার গুরুত্ব বেড়েছে।

বিগত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ইতিমধ্যে কালজানি, গদাধর, তোর্ষা, ঘরঘরিয়া, রায়ডাক নদীর জলস্তর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কালের বিবর্তনে ব্যবহার কমলেও কদর কমেনি বৈঠাচালিত নৌকার। বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত নাজিমুদ্দিন শেখ। সারাদিন হাতুড়ি, পেরেক দিয়ে নৌকা বানানোর মধ্যেই চলছে নিজেদের মধ্যে খুনশুটি।

নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘কুড়ি বছর ধরে নৌকা তৈরি করছি। বর্ষায় এদিককার বেশিরভাগ নদী ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। মাছ ধরার জন্য ডিঙি নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। এবার চারটি নৌকার বরাত পেয়েছি। কুড়ি হাত নৌকা বানাতে খরচ হয় প্রায় ২১ হাজার টাকা। আর শালকাঠের হলে খরচ হয় ৫০-৬০ হাজার টাকা।’

শুধু বালাভূতই নয়, মহকুমার নাককাটিগছ, মহিষকুচি-১, অন্দরানফুলবাড়ি-১, মারুগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও কারিগররা নৌকা তৈরি করছেন। নৌকা তৈরি যথেষ্ট ঝক্কির কাজ। পরপর পেরেক দিয়ে কাঠ জোড়া লাগিয়ে নৌকার খোল তৈরি করতে হয়। জলের প্রবেশ আটকাতে বাইরের দিকে টিন লাগাতে হয়। ক্রেতা চাইলে তবেই নৌকা রং করেন কারিগররা। সব মিলিয়ে এক-একটি কুড়ি হাতের নৌকা তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ।

মহিষকুচি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘনাপাড়া এলাকার নৌকা কারিগর মজিবর শেখের কথায়, ‘ছোটবেলায় ঠাকুরদার হাতে কাজ শেখা। তবে নৌকার চাহিদা আগের মতো নেই। বাকি সময়টা আসবাবপত্র তৈরি করি। কাঠ ও লোহার দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে টিকে থাকা দায়। শুধুমাত্র ভালো লাগে বলে এই কাজ করি।’ এই মুহূর্তে ছয়টি নৌকা সারাই করছেন বলে তিনি জানান।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *