গাজোল ও কালিয়াচক: সদ্যোজাত থেকে চার বছরের শিশু চুরি। দুই ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত হিসাবে পুলিশের জালে দুইজন মহিলা। আর এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় শনিবার দিনভর তোলপাড় গাজোল থেকে কালিয়াচক।
এদিন সাতসকালে গাজোল স্টেট জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে এক সদ্যোজাতকে চুরির ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় হাসপাতাল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের এলাকা থেকে শিশু সহ এক মহিলাকে আটক করা হয়। যার জেরে ওই মহিলাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে গাজোল থানার পুলিশ। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় বিশাল পুলিশবাহিনী উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে অভিযুক্ত মহিলাকে হেপাজতে নেয়।
জানা গেছে, অভিযোগকারী ওই প্রসূতির নাম হাসি সাহা। তিনি জানান, বাপের বাড়ি বুজরুক বান্ধাইল এলাকায়। বিয়ে হয়েছে পুরাতন মালদায়। সন্তান প্রসবের জন্য বাপের বাড়ি এসেছিলেন। গত বুধবার ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। প্রথম সন্তান মেয়ে। এদিন হাসপাতাল থেকে ছুটি নেওয়ার কথা ছিল। এক মহিলাকে তাঁর সদ্যোজাতকে দেখতে বলে তিনি জেরক্স করতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন সন্তানও নেই এবং ওই মহিলাটিও নেই। এরপরই তিনি কান্নাকাটি করতে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতাল চত্বরে খোঁজাখুঁজির পরেও শিশু সহ ওই মহিলার খোঁজ না মেলায় আশেপাশের এলাকায় তল্লাশি শুরু হয়। অবশেষে হাসপাতাল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বেলডাঙ্গি এলাকা থেকে বাচ্চা সহ আটক করা হয় অভিযুক্ত মহিলাকে। তাকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। এরপরেই শুরু হয় উত্তেজনা।
পাশাপাশি কালিয়াচকে চার বছরের শিশুকে চুরি করতে গিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়ল এক মহিলা। শনিবার দুপুরে ওই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীরা ধৃতকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার জালুয়াবাধাল গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর গ্রামের নাবিউল শেখের চার বছরের ছেলে ফারাজ শেখের হাত ধরে এদিন দুপুরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল এক অপরিচিত মহিলা। তাকে বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। গ্রাম থেকে কিছু দূর যাওয়ার পরেই বাচ্চাটি কান্নাকাটি শুরু করে। তখনই এলাকার লোকজন ছুটে গিয়ে ওই মহিলাকে ধরে ফেলে।
এরপর শিশুটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। বাচ্চাটিকে গোপনে তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে ওই মহিলা কোনও উত্তর দেয়নি। খবর পেয়ে কালিয়াচক থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্দেহভাজন মহিলাকে আটক করে নিয়ে যায়। কালিয়াচক থানার আইসি সুমন রায় চৌধুরী বলেন, ‘ছেলেধরা সন্দেহে এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও প্রাথমিকভাবে ওই মহিলার নাম ও ঠিকানা জানায়নি। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গাজোল হাসপাতালে শিশু চুরির সাথে যুক্ত ওই মহিলার নাম প্রিয়া পাল। বাড়ি গোরুহাট সংলগ্ন পালপাড়া এলাকায়। জানা গেছে বেশ কয়েকদিন ধরে অভিযুক্ত মহিলা প্রসূতি বিভাগে ঘোরাঘুরি করছিলেন। বিভিন্ন প্রসূতির সঙ্গে গল্প করতেন, তাদের বেডে গিয়ে বসতেন। অভিযোগকারী হাসি সাহা বলেন, ‘ভেবেছিলাম হয়তো তিনি কোনও প্রসূতির আত্মীয়া। তাই বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু ওই মহিলা যে শিশু চুরির উদ্দেশে ঘুরছেন তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি।’
হাসপাতাল সুপার ডাঃ অঞ্জন রায়ের কথায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশও তৎপরতা দেখিয়েছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ সিসিটিভি ক্যামেরা আর নিরাপত্তারক্ষী দরকার।’