সানি সরকার, শিলিগুড়ি: ভবিষ্যতে দুর্গম পাহাড়ও হতে পারে পর্যটনকেন্দ্র (Tourism)। উড়ান প্রকল্পে দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় হেলিপ্যাড (Helipad) তৈরির যে প্রস্তাব নিজের বাজেটে রেখেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, তাতে এই সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। মেডিকেল ট্যুরিজমে জোর দেওয়ার পাশাপাশি পর্যটনে ভিসা প্রথায় শিথিলতা আনার কথাও তাঁর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পর্যটন ব্যবসায়ীদের দীর্ধদিনের দাবি মেনে ‘লাইফ অ্যান্ড টাইমস অফ লর্ড বুদ্ধ’ ট্যুরিজম সার্কিট গড়ে তোলার আশ্বাসও মিলেছে আগামী অর্থবর্ষের বাজেটে। যার জন্য পর্যটন ক্ষেত্রে খুশির হাওয়া। আয়করের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি, ছোট ও মাঝারি শিল্পে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো সহ বেশ কিছু পদক্ষেপে খুশি শিল্প ও বাণিজ্য মহল। বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও বাজেটকে কার্যত স্বাগত জানিয়েছে সবপক্ষই। তবে চা শিল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নীরব থাকায়, হতাশ অনেকে। দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্টের বক্তব্য, ‘পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে চা শিল্প। এই বাজেটে উত্তরবঙ্গের আমূল পরিবর্তন ঘটবে।’
গত বছর বাজেটে পর্যটনের ক্ষেত্রে কর্পোরেট ধাঁচের কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটে সরাসরি কর্পোরেট পথে না হাঁটলেও, আধুনিকতার উল্লেখ করেছেন তিনি। যে কারণে পর্যটনেও বেসরকারি বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে ৫০টি নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বলেছেন। বাজেটে উল্লেখযোগ্য দিক হল, পর্যটনের প্রসারে পাহাড়ি এলাকায় হেলিপ্যাড তৈরির পাশাপাশি হেলিকপ্টার সার্ভিস চালুর প্রস্তাব। বাগডোগরা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কথা মাথায় রেখে এমন উদ্যোগ। বাজেট আশ্বাস যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে দার্জিলিং পাহাড়ের দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকাতেও পর্যটকদের ভিড় জমবে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘এটা সময়ের দাবি। কেননা, পর্যটন এখন আর শহরকেন্দ্রিক নয়। হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু হলে প্রত্যন্ত এলাকাতেও মানুষ যাবেন।’ বুদ্ধিস্ট সার্কিট নিয়েও পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশাবাদী। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলছেন, ‘এমন সার্কিটের দাবি দীর্ঘদিনের। সার্কিটে যদি দার্জিলিং ও কালিম্পং যুক্ত করা হয়, তবে এই অঞ্চল উপকৃত হবে।’ মেডিকেল ট্যুরিজমে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু উত্তরবঙ্গের মেডিকেল ট্যুরিজম নির্ভরশীল বাংলাদেশের ওপর। কিন্তু কাঁটাতারের ওপারে এখন অস্থির পরিস্থিতি। ফলে চিকিৎসা পর্যটন কতটা আশার আলো দেখবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। হোমস্টের ক্ষেত্রে মুদ্রা লোনের কথাও বলা হয়েছে। অধিকাংশ হোমস্টে অবৈধভাবে লিজে চলায়, এমন ঋণ দেওয়ার পথ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধির পাশাপাশি ছোট, মাঝারি শিল্পে নজর দিয়ে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো, ধন ধান্য কৃষি যোজনার জন্য একশোটি জায়গাকে বেছে নেওয়া, কিষান ক্রেডিট কার্ডে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিতে উত্তরের কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্য মহল খুশি। শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় সিংহল বলছেন, ‘আয়করের নতুন কাঠামোয় মধ্যবিত্ত উপকৃত হবে। চাঙ্গা হবে বাজার।’ ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের সঞ্জয় গোয়েল অবশ্য মনে করেন, ‘এবারের বাজেটে ভালো এবং মন্দ, দুটি দিকই রয়েছে।’ বাজেটকে স্বাগত জানালেও শিল্পে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিকে ‘অবশেষে বোধোদয়’ হিসেবে দেখছেন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জিত সাহা। বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি অর্ণব বসু মনে করেন, ‘শুধু মধ্যবিত্তরা উপকৃত হবেন, তা নয়। একাধিক বাজেট বরাদ্দে পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটবে।’ তবে চা বাগান নিয়ে কোনও দিশা না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নর্থবেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সঞ্জয় টিব্রুয়াল।