নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: দুটো মাদলকে ছেলে ও মেয়ে সাজিয়ে তাদের মধ্যে আবার বিয়ে হয় নাকি! হয়। এটা টোটো জনজাতির একটা রীতি। আর এই দুই ছেলেমেয়ের আবার বাবাও থাকেন। দুই পরিবারের মধ্যে মেয়ের বাবার আধিপত্য আবার বেশি থাকে। টোটোদের এই উৎসবের নাম নাইয়ূ উৎসব। যা মাদারিহাটের টোটোপাড়া (Totopara) বাজারে অবস্থিত ঢেমশা মন্দিরে শুরু হল শনিবার। চলবে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
টোটোদের সবচেয়ে বড় উৎসব এই নাইয়ূ। শনিবার এই বিয়ের আসরে টোটো ছেলেমেয়েরা তাদের নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী ধনীরাম টোটো, এক এনজিওর সদস্য রাজীব দেবনাথ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের প্রধান কাইজি (পুরোহিত) হলেন ইন্দ্রজিৎ টোটো। ইন্দ্রজিৎ জানালেন, তাঁদের পূর্বপুরুষের রীতি মেনে দুটি মাদলকে ছেলে ও মেয়ে সাজিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। মেয়ের বাবা তিনি নিজেই। আর ছেলের বাবা তাঁর সহযোগী কাইজি সুগ্রীব টোটো। নিয়ম মেনে ছেলের বাবা ও আত্মীয়পরিজনরা তাঁর কাছে ছেলের বিয়ের আর্জি নিয়ে আসেন। এরপর টোটোদের মন্দিরে (ঢেমশা) জাঁকজমক করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। সেই বিয়ের অনুষ্ঠান শনিবার হল। তবে তার আগে প্রকৃতিকে পুজো করা হয়।
এই বিয়েতে দুটো শুয়োর বলি দেওয়া হয় বলে জানালেন সহকারী কাইজি সুগ্রীব টোটো। সেই মাংস রান্না করতে কোনও তেল, মশলা, পেঁয়াজ, রসুন ব্যবহার করা যাবে না। শুধু লবণ ও কাঁচালংকা দিয়ে জলে সেদ্ধ করতে হবে। আর যে যার বাড়ি থেকে ভাত নিয়ে আসবেন। এরপর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে হবে ভূরিভোজ। সঙ্গে থাকবে টোটোদের তৈরি হাঁড়িয়া জাতীয় বিশেষ পানীয়।
নাইয়ূ উৎসবের দ্বিতীয় দিন হবে গোয়াতিপুজো। এই পুজো না করে কোনও টোটো পরিবার কোনও ফলমূল মুখে তুলতে পারবেন না। রবিবার গোয়াতি পুজো করে তাঁরা কমলালেবু, বাতাবিলেবু, আপেল সহ নানারকম ফল খাবেন। আর এই ফল খাওয়া চলবে আগামী বছর ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর ১৫ এপ্রিল ‘সকংকো সরগে’ এই পুজো করে ফলমূল খাওয়ায় বিরতি টানবেন তাঁরা।