শিলিগুড়িঃ নদীবক্ষে পলি জমে যাওয়ার কারণে ক্রমশ গতি পরিবর্তন করছে তিস্তা নদী। প্রবল বর্ষণে নদীতে অত্যাধিক হারে জল বেড়ে যাওয়ায় গতি পরিবর্তন করে গ্রাস করছে জনবসতি ও বনভূমি। সেই কারণে এবার সেচ দপ্তর তিস্তার নদী বক্ষে ‘জিরো কস্ট এফেক্ট’ ড্রেজিং শুরু করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। বুধবার শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউজে সেচদপ্তরের বৈঠকের পর তেমনটাই জানান সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিস্তার ভাঙন রুখতে সেচদপ্তর একাধিক জায়গায় বাঁধ সংস্কার করলেও তিস্তার গ্রাস থেকে বনভূমি কিংবা জনবসতিকে বাঁচাতে পাকাপোক্ত কি পদক্ষেপ হওয়া দরকার সেই বিষয়ে কোনও পথ দেখাতে পারেননি সেচমন্ত্রী।
তিস্তার গ্রাসে ডাবগ্রাম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্তগর্ত চমকডাঙি পুরোটাই চলে গিয়েছে। লালটং বস্তির প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা তিস্তার গর্ভে চলে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন ওই এলাকা থেকে বহু পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে। নদী তীরবর্তী সেই এলাকাগুলি কি করে বাঁচানো যাবে তার কোনও দিশা সেচ দপ্তর দেখাতে পারেনি। সেবক থেকে মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত তিস্তা নদীর দুই ধারে বিভিন্ন জায়গাতে বাঁধের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। চাপাডাঙা, ওদলাবাড়ির বেশ কিছু অংশে প্রতি বছরই তিস্তার জল ঢুকে জনবসতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে। যেই সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি।
যদিও বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে দুষেছেন মানস ভুঁইয়া। তাঁর কখায়, ‘নদী ভাঙন রুখতে কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রনে কেন্দ্র সরকার ২০১৬ সালের পর থেকে টাকা দিচ্ছে না। রাজ্য সরকার নিজস্ব টাকা খরচ করে ভাঙন রোখার চেষ্টা চালাচ্ছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট এন্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড এতদিন নদী ড্রেজিং করছিল। এবার ওই সংস্থার সঙ্গে সেচ দপ্তর কাজ করবে। জিরো কস্ট এফেক্টে নদী ড্রেজিং হলে সেচ দপ্তরের আয় বাড়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপকার হবে।’
এদিন, সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে মানস ভুঁইয়া মহানন্দা ও বালাসন নদীর বেশ কয়েকটি অংশ পরিদর্শন করেন। সেখানে সেচ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছিলেন। ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠন না হওয়ায় এদিন মানস কেন্দ্র সরকারকে নিশানা করেন। অভিযোগ, ভুটানের ৭৬টি নদী উত্তরবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সেগুলিতে কেবল ৬টি ওয়ার্টার গেট রয়েছে। সেচমন্ত্রীর সংযোজন, ‘ভুটানে কয়েক ঘন্টা বৃষ্টি হলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ভেসে যায়। সেই কারণে প্রতিবেশী দেশে অন্তত ৫৫টি ওয়ার্টার গেজ তৈরির প্রয়োজন। কেন্দ্রকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিলেও কোনও কাজ হয়নি। আইএমডি, সেন্ট্রাল ওয়ার্টার কমিশন, এনএইচপিসিকে নিয়ে আগাম সতর্কতা পেতে আলাদা সেন্টার তৈরি করে একত্রে কাজ করা হবে।’ বৃহস্পতিবার সেচমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারে নদী পরিস্থিতি দেখতে যাবেন। পাশাপাশি ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন নিয়ে নতুন করে কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।