পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: সিকিমের (Sikkim) লেক বিপর্যয়ের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে উত্তরবঙ্গে তিস্তা নদীর উপর মাস্টার প্ল্যান (Teesta Grasp Plan) তৈরি করছে ব্রহ্মপুত্র বোর্ড। সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্টকে (Raju Bista) লিখিতভাবে এই কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজভূষণ চৌধুরী। সাংসদ এমন দাবি করলেও রাজ্য সরকার এবিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করেছেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি বলছেন, ‘ব্রহ্মপুত্র বোর্ড আমাদের সদস্য করেছে ঠিকই। কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলিতে অর্থ দিচ্ছে না। রাজ্য তিস্তার ড্রেজিং নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে। কেন্দ্র তিস্তাকে নিয়ে মাস্টার প্ল্যান করতে চাইলে আমাদের না জানিয়ে করতে পারবে না।’
সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক আবার জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গে তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে বন্যা নিয়ন্ত্রণে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত বলে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের বৈঠকে জানিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানা নেই।
২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর সিকিমের লোনাক লেক বিপর্যয়ে সিকিমের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের একটা বড় অংশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিছু জায়গায় গতিপথ বদলে নেয় তিস্তা। এখনও বালি, নুড়ি জমে ভরাট হয়ে রয়েছে নদীগর্ভ। ফলে আসন্ন বর্ষায় নদী আবার ফুলেফেঁপে উঠতে পারে। সেই পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইতিমধ্যে সেবক থেকে ময়নাগুড়ির বাকালি পর্যন্ত তিস্তা নদীগর্ভে ড্রেজিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কয়েকদিন আগেই রাজ্যের সেচমন্ত্রী সেই কথা উত্তরবঙ্গ সংবাদকে জানিয়েছিলেন। এবার কেন্দ্রের তরফেও মাস্টার প্ল্যান করা হচ্ছে বলে পালটা দাবি করছেন রাজু।
দার্জিলিংয়ের সাংসদ বলছেন, ‘ব্রহ্মপুত্র বোর্ড কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা জানতে লোকসভার বাজেট অধিবেশনে প্রশ্ন করেছিলাম। কালিম্পং, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। ব্রহ্মপুত্র বোর্ড তিস্তাকে নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে বলে জানতে পেরে খুশি হয়েছি।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লিখিতভাবে জানিয়েছেন, সিকিমের লেক বিপর্যয়ের পর কেন্দ্র সিকিমকে ৪০ কোটি টাকা সাহায্য করেছে। কোচবিহার জেলায় তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ভোটপাড়ার বিএসএফ ক্যাম্প ও একটি গ্রাম বাঁচাতেও ব্রহ্মপুত্র বোর্ড উদ্যোগী হয়েছে। এবার মাস্টার প্ল্যানও হচ্ছে। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ ছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য কাজ করা হবে। এমনকি তিস্তার জলকে দূষণমুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের সদস্য পশ্চিমবঙ্গ। বিশেষ করে বোর্ডের বৈঠকে অংশ নিয়ে থাকেন সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। সিকিম লেক বিপর্যয়ের পর কালিম্পং পাহাড়ে বোর্ডের বৈঠক বসেছিল। চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলছেন, ‘রাজ্য সরকার তিস্তায় ড্রেজিং করলেও বোর্ডের মাস্টার প্ল্যানে কোনও সমস্যা হবে না। কেন্দ্র যদি সত্যিই মাস্টার প্ল্যানের উদ্যোগ নিয়ে থাকে তাহলে আমাদের সঙ্গে বোর্ড অবশ্যই কথা বলবে। আমাদের দিক থেকে সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতেই হবে।’
এই বিষয়ে রাজ্যকে এখনও কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ভারত-ভুটান নদী কমিশন নিয়ে কেন্দ্রকে জানানোর পরও কোনও উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্র। জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়ের পালটা পরমার্শ, ‘প্রয়োজনে কেন্দ্রকে প্রস্তাব পাঠাক রাজ্য। আমার এলাকা দিয়ে তিস্তা প্রবাহিত। সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমিও কেন্দ্রকে জানাতে পারি।’