সুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: সুনীল ছেত্রীকে অবসর ভাঙিয়ে ফিরিয়ে আনা যে তাঁর পছন্দ হয়নি, এই কথা গোপন করেননি তিনি। বাংলাদেশ ম্যাচের পর বাইচু ভুটিয়া এই অতি-সুনীল নির্ভরতা নিয়ে খোলাখুলি সমালোচনা করতে দ্বিধা করলেন না।
মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তিনি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে ভারতের আক্রমণ বিভাগের দৈন্যতার কথা তুলে ধরেন। তাঁর মত, ‘গোটা ম্যাচেই আমরা আক্রমণে বৈচিত্র্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছি। এত চেনা আক্রমণের ধরন! সেই উইং দিয়ে বল নিয়ে ড্রিবল করে পাস বা ক্রস। যেখানে আশা করা হচ্ছে, বলটা সুনীলের মাথায় গিয়ে পড়বে এবং তা থেকে গোল হবে।’ তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কার যে ভারতীয় ফুটবলের এই গেমপ্ল্যান ধরে ফেলতে এখনকার দিনে কোনও দলেরই আর কোনও সমস্যা নেই। তাছাড়া লম্বা সময় ধরে খেলা ৪০ বছরের সুনীলের পক্ষে এখন প্রতি ম্যাচই একইভাবে বার করে আনাও সমস্যা নয়। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা বুদ্ধি প্রয়োগ করে আটকে দিচ্ছেন দেশের সর্বকালের সর্বাধিক গোলদাতাকে।
বাইচুং বলে ফেলেন, ‘এখন তো আর ডিফেন্ডিং আগের মতো নেই, তাই না? আগেকার দিনে ডিফেন্ডাররা সেভাবে লাইন মেনে খেলা বা নিজেদের সঠিক আকার ধরে রেখে খেলত না। ফলে গোল এসে যেত একটু ভালো স্ট্রাইকারের কাছ থেকে।’ সুনীলের এক যুগ আগের গোল পাওয়ার সুবিধার কথা বলতে গিয়ে বাইচুং আরও মন্তব্য করেন, ‘কিন্তু আজকার খেলা হয় একটা পরিকল্পনা মেনে। ফলে এখন আপনাকে পাসিং, গতি, জায়গা নেওয়া সবকিছুতেই বাড়তি বুদ্ধিমত্তা দেখাতে হবে। কারণ আপনার ডিফেন্ডাররা কিন্তু জোনাল মার্কিংই হোক কী ম্যান মার্কিং বা নিজেদের ডিফেন্সের সংঘবদ্ধতা ধরে রেখে খেলতে তৈরি হয়ে গিয়েছে।’ ভারতীয় ফুটবলের যে সেই একঘেয়ে সুনীলের মাথা লক্ষ্য করে শুধুই বল তুলে যাওয়া কার্যকারিতা হারিয়েছে, একথা বলতে কোনও দ্বিধা নেই পাহাড়ি বিছের।
মালদ্বীপের মতো দূর্বল দলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে এভাবে গোল পেলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাত্র একবারই লিস্টন কোলাসো এভাবে সুনীলের জন্য সঠিক জায়গায় বল ফেলতে পেরেছিলেন। কিন্তু সুনীলের হেড বাইরে যায়। বাইচুং এই নিয়ে উইং হাফদেরও যথেষ্ট তুলোধোনা করলেন, ‘একবারও বাংলাদেশের গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডারদের মাঝখানে বল পড়ল না উইং থেকে। অথচ তুমি নির্ভর করে আছো, সুনীলের হেডের উপর।’ এই প্রসঙ্গেই মজা করে বাইচুংয়ের মন্তব্য, ‘যে রেটে ক্লাব থেকে জাতীয় দল, সকলেই সুনীলের মাথা লক্ষ্য করে বল ফেলছে তাতে তো ওর দ্বিতীয় অবসরের আগে সুনীলের রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যাবে।’ অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে ভুল মানালো মার্কুয়েজ করেছেন। যেভাবে সুনীলকে এখন তাঁর ক্লাবে উইংয়ে খেলানো হয় সেভাবেই খেলানো উচিত ছিল সামনে ইরফান ইয়াদওয়াদকে খেলিয়ে। অথবা সুনীলের সঙ্গে আয়ুষ দেব ছেত্রী নয়, প্রয়োজনে ফারুখ চৌধুরী বা ইরফানকে খেলিয়ে নম্বর ১০ পজিশনে নাওরেম মহেশ সিংকে খেলানো। তবে বাইচুংয়ের সঙ্গে প্রায় সকলেই মনে করছেন, ভারতীয় আক্রমণভাগের আবস্থা বিপজ্জনক খারাপ জায়গায় চলে যাচ্ছে ক্রমশ।