বর্ধমানঃ স্কলারশিপ মিলছে না। তাই বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ‘অনশন’ শুরু করেছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী বন্দি অর্ণব দাম। মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেও দেখা করতে পারলেন না এপিডিআরের প্রতিনিধিরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন অর্ণব। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি গবেষণার কাজে অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু গবেষণা করলেও তার জন্য মিলছে না স্কলারশিপ। এবার পিএইচডি গবেষক হিসেবে স্কলারশিপের দাবিতে তিনি গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেই অনশন আন্দোলন শুরু করেছেন।
অর্ণবের অভিযোগ,“তাঁর মেধাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না সরকার। স্কলারশিপ না পাওয়ারর জন্য তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও চিঠি লিখেছেন অর্ণব। তাতেও কোনও কাজ হয়নি বলে তাঁর দাবি।
এই পরিস্থিতিতে অর্ণব দামের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। মঙ্গলবার এপিডিআরের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্কর নাথের সঙ্গে দেখা করেন। এপিডিআরের সদস্য অমিতাভ সেনগুপ্ত জানান,“অর্ণব কেন স্কলারশিপ পাচ্ছে না সেটা জানতে চাইলে উপাচার্য তাঁদের রাজ্য সরকারের অর্ডার দেখান। যাতে অর্ণব দামকে স্কলারশিপ দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ আছে। উপাচার্য তাঁদের আরও জানান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন স্কলারশিপ এবছর নেই। তবে অন্যান্য ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অর্ণবকে সাহায্য করা হয়েছে বলে তাদের জানান উপাচার্য।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এপিডিআরের প্রতিনিধিরা বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পৌঁছান সেখানে অর্ণব দামের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে জানান এপিডিআরের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যা জয়শ্রী পাল। তা নিয়ে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, যতক্ষণ না তাদের অর্ণবের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে ততক্ষণ তারা এই সংশোধনাগারের সামনেই থাকবেন।
পরে জয়শ্রী পালের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ করে দেয় জেল কর্তৃপক্ষ। জয়শ্রী পাল অনশনরত অর্ণবকে তার পরিবারের জন্য অনশন তুলতে অনুরোধ করেন। বিষয়টি বিবেচনার মধ্যে রাখছেন বলে অর্ণব তাদের জানান।
উল্লেখ্য, খড়গপুর আইআইটির মেধাবী ছাত্র তথা মাওবাদী নেতা অর্ণব পড়াশোনা ছেড়ে সিপিআই (মাওবাদী) দলের রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে সেই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই হিংসার রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন তিনি। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশ অর্ণব দামকে গ্রেপ্তার করে। তখন থেকেই জেলবন্দি তিনি। ২০১০ শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলায় ২৪ জন জওয়ান শহিদ হন। এই হামলার নেতৃত্ব দেন অর্ণব। এছাড়াও ৩১টি গুরুতর মামলা ছিল অর্ণবের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালে আসানসোলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে এই বন্দি অবস্থাতেই ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করতে চাইলে আদালত তাঁকে অনুমতি দেয়। তখন থেকে জেলেই পড়াশোনায় মন দিয়েছিলেন অর্ণব দাম। তারপর মেদিনীপুর সংশোধনাগার থেকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে এসে ইগনু থেকে তিনি ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। দু’টিতেই ফার্স্ট ক্লাস পান এই মাওবাদী নেতা। ২০১৮ সালে স্টেট লেভেল এলিজিবিলিটিট টেস্টও পাশ করেন। এখন তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছেন। গত বছর ২৬ জুন পুলিশের পাহারায় ইন্টারভিউ দিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যান অর্ণব। আর গত বছরের ৫ জুলাই মেধাতালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। আর ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে প্রথম হন অর্ণব দাম। শুরু হয় পিএইচডি পড়াশোনা।