রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ) (SJDA)-র আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে কেন্দ্রের ছাড়পত্র না আসায় আটটি মামলায় চার্জশিট জমা দিতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থা। সিআইডি সূত্রের খবর, দুটি মামলার চার্জশিট ইতিমধ্যে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলির ক্ষেত্রে ছাড়পত্র চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে ফাইল পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে ওই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শিলিগুড়ির একটি এজেন্সির কর্তা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সূত্রের খবর, তিনি ওই দুর্নীতি মামলা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার দাবি করেছেন।
বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির পরও রাজ্য সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই দুর্নীতিতে মূল অভিযুক্ত আইএএস অফিসার গোদালা কিরণ কুমারকে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কালিয়াপ্পন জয়রামন গ্রেপ্তার করেছিলেন। সেই অপরাধে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জয়রামনকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর অভিযুক্তকে পরদিনই ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে রাজ্য সরকারের কোনও সদিচ্ছাই নেই।’
শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব অশোকের দাবি নস্যাৎ করছেন। তাঁর পালটা যুক্তি, ‘আমি এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান হওয়ার পরই ওই দুর্নীতি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তবে, মামলাগুলির বর্তমান স্ট্যাটাস আমার জানা নেই। জেনে বলতে হবে।’
২০১৪-’১৫ সালে এসজেডিএ-তে ২০০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপরই তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে সরিয়ে দিয়ে গৌতম দেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে, যাঁর আমলে এই দুর্নীতির অভিযোগ সেই চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) গোদালা কিরণ কুমারকেও এখান থেকে মালদায় বদলি করা হয়। গৌতম দায়িত্বে আসার পরই তাঁর নির্দেশে এসজেডিএ’র তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী প্রধাননগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এই ঘটনা পরবর্তীতে সিআইডির হাতে যায়। সূত্রের খবর, এই দুর্নীতি নিয়ে মোট ১০টি মামলা রুজু হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি মামলায় বেশ কিছুদিন আগেই সিআইডি আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে। বাকি আটটি মামলার চার্জশিট তৈরি করে অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। সিআইডি জানিয়েছে, কোনও মামলায় আইএএস, আইপিএস জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই মামলাগুলির চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়ার জন্য দিল্লি এখনও ছাড়পত্র দেয়নি। ফলে মামলাগুলি ঝুলে রয়েছে।
সম্প্রতি শিলিগুড়ির (Siliguri) ডাবগ্রামের বাসিন্দা একটি এজেন্সির কর্তা হাইকোর্টে আবেদন করে এসজেডিএ’র দুর্নীতি মামলা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, মামলা হওয়ার পর তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তাই ওই মামলা এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়। এসজেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, এজেন্সিটি সিসিটিভি ক্যামেরা সরবরাহের বরাত পেয়েছিল। কিন্তু কাজ না করে, কোনও সরঞ্জাম সরবরাহ না করেই দু’দফায় মোট সাত কোটি টাকা পেয়ে গিয়েছিল। তদন্তে ওই এজেন্সির বিরুদ্ধেও প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, ‘তদন্ত তিন বছর কেন, পাঁচ-দশ বছরও চলতে পারে। কাজেই উচ্চ আদালতে ওই এজেন্সির আবেদন ধোপে টিকবে না।’