সিপ কেন করবেন, এর উপকারিতা কী–এই নিয়ে বহু আলোচনা ইতিমধ্যেই হয়েছে। কিন্তু কেন সিপ বিকল্পহীন, এক এবং অদ্বিতীয়, কোন বৈশিষ্ট্যগুলি একে আলাদা করে তোলে, এই লেখায় বিশদে জানালেন রাজেশ মুখার্জি।
নিয়মিত কিছু টাকা জমিয়ে একটা রীতিমতো বড়সড় পরিমাণ যাকে আমরা ইনভেস্টমেন্টের ভাষায় ‘Corpus’ বলি, তৈরি করার স্বপ্ন বা ইচ্ছা এবং প্রয়োজন সবার থাকে। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ মধ্যবিত্ত সবার ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষা, বিয়ে, সর্বোপরি ‘রিটায়ারমেন্ট কর্পাস’ তৈরি করার জন্য ‘ইনভেস্টমেন্ট ইনকাম’ অভাবনীয় সাহায্য করে। এটা সারা পৃথিবী জুড়ে প্রমাণিত। সেই ইনভেস্টমেন্ট যদি হয় ‘সিস্টেম্যাটিকালি প্ল্যানড’, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য অবিশ্বাস্য এবং ‘ম্যাজিকাল অ্যামাউন্ট’ তৈরি করা সম্ভব। ভারতবর্ষে এই প্ল্যানের নাম সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান। বিভিন্ন রকম মিডিয়া এবং ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়া বিনিয়োগ পরামর্শদাতাদের কল্যাণে এই নাম এখন সর্বজনবিদিত। কিন্তু সকলে জানলেই তো হবে না, দেখতে হবে–সকলে নিয়ম মেনে করছেন কি? যঁাদের যে সময় শুরু করার কথা তঁারা শুরু করেছেন কি?
জুলাই ২০২৫ -AMFI ডেটা অনুযায়ী distinctive SIP folio মোটামুটি ৯ কোটির কাছাকাছি। ‘ইউনিক’ বিনিয়োগকারী ধরলে ৫-৬ কোটির কাছাকাছি হবে। জুলাই মাসে স্টপেজ রেশিও ছিল ১২৫% (সূত্র: AMFI ডেটা)। তাহলে কী করে ভারতের সর্বস্তরের মানুষ এই SIP-এর বেনিফিট নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিয়ে যাবেন? এই সূত্রে বলে নেওয়া ভালো, এই মুহুর্তে ভারতে মাসিক SIP-এর পরিমাণ প্রায় ২৮,০০০ কোটি টাকা (জুলাই, ২০২৫)।
SIP -এর সাফল্যের মূল মন্ত্র আপনারা সকলেই জানেন। রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং এবং পাওয়ার অফ কম্পাউন্ডিং। রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং হল শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বাজার ভাল, বাজার খারাপ-আপনার নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের SIP বাজার থেকে ইকু্যইটি, হাইব্রিড, বন্ড, গোল্ড (যে অ্যাসেটে আপনি SIP করছেন) সেটা কেনা হবেই। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দামে কেনা হয়, তাই একটু লম্বা সময় থাকলেই অ্যাভারেজ কস্ট কম হওয়ার সম্ভাবনা। আজকের মোদ্দা কথা হল, অমি কয়েকটা বাস্তব জীবনের উদাহরণ আপনাদের সামনে রাখতে চাই, মাসিক একটা ছোট পরিমাণ বিনিয়োগ আপনার কতটা কাজে আসতে পারে।
উদাহরণ ১: আমার পরিচিত একজন ভাই নভেম্বর, ২০১০-এ মাসিক ৪,০০০ টাকার ‘Nippon India Mid Cap Fund’ এ ১০ বছরের জন্য SIP করেছিলেন। ডিভিডেন্ড রি-ইনভেস্টমেন্ট অপশন-এ করা ছিল। অক্টোবর, ২০২০-তে ইনভেস্টমেন্ট তিনি বন্ধ করে দেন। ওই ফোলিওতে (xxxxx72) আজকের মূল্য ₹২৮,০৩,০০০/-। ১০ বছর ধরে মাসে ৪,০০০ টাকা SIP করে মোট বিনিয়োগ ৪,৮০,০০০/-। মানে ব্যাপারটা হল যে অক্টোবর, ২০২০-তে SIP শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ইনভেস্টর টাকাটা তোলেননি। তাই আজকের ভ্যালুয়েশন ₹২৮,০৩,০০০/।
উদাহরণ ২: আমি দেখেছি, জুলাই, ২০১০ সাল থেকে যে সমস্ত বিনিয়োগকারী ‘Mirae Asset Giant & Mid Cap Fund’- এ মাসে ১০,০০০/- টাকা করে SIP করেছেন এবং আজ পর্যন্ত কন্টিনিউ করছেন, মোট জমা করেছেন, ₹১৮,০০,০০০/-। আজকের ভ্যালুয়েশন প্রায় ₹৯৪,৫০,০০০/-। (৩১.০৭.২০২৫) এখানে XIRR আসছে = ২২% প্রায়।
উদাহরণ ৩: আমার আরেকজন দাদা জুন, ২০১২ থেকে একটি পরিচিত মাল্টি ক্যাপ ফান্ডে মাসিক ২,৫০০/-টাকা SIP করেছিলেন ১০ বছরের জন্য। ফোলিও নং (XXXXX826)। আজকের মূল্য ₹১২,১২,০০০/-। উপরিউক্ত কোনও ফান্ডের প্রতি আমার কোনও পক্ষপাত নেই।
আমি বলতে চাই যে, কেন আজকের দিনেও ফিনান্সিয়াল প্রোডাক্ট মাত্র ৬-৭% মানুষের পোর্টফোলিওতে থাকবে? প্রতিটি ঘরে যে রকম ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে রিকারিং ডিপোজিট আছে, সে রকম অন্তত ১,০০০/-টাকার একটা SIP যদি ১০ বা ১৫ বছরের জন্য চালান, অনেকটাই উপকার হতে পারে।
কিন্তু এখানে শর্ত আছে, মোটামুটি একটা ভালো ফান্ড বেছে নিজের জীবনে আর্থিক লক্ষ্য অনুযায়ী ইনভেস্টেড থাকতে হবে। SIP শুরু করার ১ বছর, ২ বছর বা ৩ বছরের মাথায় কোনও ম্যাজিক দেখতে পাওয়া যাবে না। আপনার হাতেই অ্যাপ আছে, অতএব রোজ ফান্ড পারফরম্যান্স তুলনা করলে লম্বা সময় ‘ইনভেস্টেড’ থাকা কিন্তু মুশকিল। আরও একটা কথা, আপনার রোজগার বেড়ে গেলে আপনার মান্থলি SIP অবশ্যই বাড়ানো উচিত। ভারতবর্ষ পৃথিবীতে দ্রুত উন্নতির দেশ, অতএব এখানে ‘ডিসিপ্লিনড অ্যাপ্রোচ’-এ ছোট ছোট বিনিয়োগ চালালেও আর্থিক উন্নতির সম্ভাবনা থাকছে।
[ডিসক্লেমার : লেখকের মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। পাঠক অবশ্যই জরুরি ডকুমেন্ট পড়ে বা নিজের আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। যে সব ফান্ডের নাম উল্লেখ হয়েছে, তাদের প্রতি কোনও পক্ষপাত নেই ]