সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি : সিম কার্ড জালিয়াতির তদন্তে আন্তঃরাজ্য চক্রের হদিস পেতে পুলিশ ভিনরাজ্যে যাবে। এই জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তরা কীভাবে ভিনরাজ্যে সিম সরবরাহ করত তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। যে পাঁচজনকে এই সিম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের নিজেদের মধ্যে কোনও যোগসাজশ রয়েছে নাকি তারা আলাদাভাবে বিভিন্ন এলাকায় ভুয়ো সিম কার্ডের ব্যবস্থা করত তা জানতে অভিযুক্তদের মুখোমুখি বসিয়ে পুলিশ তাদের জেরা শুরু করেছে।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, ‘যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। তারা কোথায় কোথায় ভুয়ো সিম কার্ড সরবরাহ করত সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। এদের সঙ্গে ভিনরাজ্যের বড় কোনও চক্রের যোগ রয়েছে কি না তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন অনুযায়ী পুলিশের একটি টিমকে ভিনরাজ্যেও পাঠানো হবে।’
জলপাইগুড়ি শহর থেকে মালবাজারের এক মহিলার নামে ইস্যু করা ভুয়ো সিম কার্ড ব্যবহার করে দিল্লিতে বসে প্রতারণার বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে এসে পৌঁছেছে। পুলিশের ধারণা ধৃতর কাছ থেকে ইস্যু হওয়া ভুয়ো সিম কার্ড দিল্লির পাশাপাশি আরও বেশ কিছু রাজ্যে গিয়ে থাকতে পারে। ধৃতরা কোন রাজ্যে কাকে সিম দিয়েছে সেটা জানাই পুলিশের তদন্তের মূল বিষয়। ধৃতরা সরাসরি ভিনরাজ্যের প্রতারকদের হাতে এই সিম কার্ডগুলো তুলে দিয়েছন নাকি কারও মাধ্যমে ভিনরাজ্যে জেলা থেকে ইস্যু করা সিম কার্ড গিয়েছে তা জানতে পুুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। প্রতিটি ভুয়ো সিম কার্ড কত টাকার বিনিময়ে অনলাইন প্রতারকদের হাতে পৌঁছেছে তা পুলিশের জানার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় সাইবার ক্রাইম পোর্টালের তরফে আসা তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার মালবাজার, মেটেলি এবং নাগরাকাটা এলাকা থেকে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে পেশ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের নিজেদের হেপাজতে নেয়। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ আরও দুটি নাম পেয়েছে। সোমবার রাতে নাগরাকাটা থানার পুলিশ ওদলাবাড়ি এলাকা থেকে দীপায়ন মণ্ডল নামে একজনকে এবং মাল থানার পুলিশ মহমদ্দ মমিন নামে আরও একজনকে মাল শহর এলাকা থেকেই গ্রেপ্তার করেছে। ইতিমধ্যে সিম কার্ড তদন্ত যাতে আরও ভালোভাবে হয় তার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তৈরি করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সমীর আহমেদকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও কিছু লোক নিয়োগ করে সিম কার্ড অ্যাক্টিভেশনের দায়িত্ব দেওয়া হত। তাদের প্রত্যেককেই একটি বায়োমেট্রিক মেশিন এবং অ্যাক্টিভেশন মাস্টার সিম দেওয়া হত। যারা বিভিন্ন অফারের প্রলোভন দিয়ে নতুন সিম কার্ড বিক্রির নামে ভুয়ো সিম কার্ড তৈরি করত। প্রথম দিন গ্রেপ্তার হওয়া মাল শহরের অর্ণব দত্ত সব থেকে বেশি ভুয়ো সিম কার্ড ইস্যু করেছে বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। এরপরেই পুলিশ মাল শহরে থাকা অর্ণবের দোকানটি সিল করে দেয়।
সিম কার্ড বিক্রেতারা যাতে নতুন সিম কার্ড বিক্রির নামে ভুয়ো সিম সচল না করেন সে বিষয়ে পুলিশ সবাইকে সচেতন করছে। পাশাপাশি, সিম কার্ড নিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পুলিশ ভিডিও বার্তা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে বিশ্বাসযোগ্য জায়গা থেকে সিম কার্ড নেন পুলিশের তরফে সেই আবেদন জানানো হচ্ছে।