শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনায় শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশ যথেষ্টই অস্বস্তিতে। লোকনাথ বাজারে এটিএম লুটের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া দুষ্কৃতীরা ভিনরাজ্যের বলে তদন্তকারীদের প্রাথমিকভাবে অনুমান। তারা হরিয়ানার নূহ জেলা থেকে এখানে এসে অপারেশন চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, হাতের নাগালে পেলেও পুলিশ কী কারণে দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য করে, বিশেষ করে তাদের ব্যবহার করা গাড়ির টায়ার লক্ষ্য করে গুলি চালাল না সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং বলছেন, ‘আসলে পরিস্থিতির ওপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিস্থিতি হিসেবে আমাদের মানবিক হতে হবে। আবার কড়া ব্যবস্থার দিকেও এগোতে হবে।’
মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন একটি এটিএমে লুটপাট চালানো হয়। ফুলবাড়ি সুপার মার্কেট থেকে একটি বাইক চুরি করে তারপর অম্বিকানগর থেকে একটি গাড়ি চুরি করে গোটা অপারেশন চালানো হয়। গোটা বিষয়টি বৃহস্পতিবার বিস্তারিতভাবে উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রকাশিত হয়। বাইক চুরির পর গাড়ি চুরি করে গোটা অপারেশন চালানো হয়েছে বলে ডিসিপি (ইস্ট) স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, ‘গোটা বিষয়টি যে বাইক চুরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সেই যোগসূত্র মিলেছে। বাইকটি ভোলা মোড় এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে।’
পুলিশের প্রাথমিকভাবে অনুমান, গ্যাংয়ের দুই সদস্য ভোলা মোড়েই অপেক্ষা করছিল। তাদের সঙ্গে গ্যাস কাটার ছিল। চুরির পর বাইক ও গাড়ি নিয়ে আরও দুই দুষ্কৃতী সেখানে পৌঁছায়। তারপর সেখানে বাইক ফেলে তারা গাড়িটি নিয়ে লোকনাথ বাজারের এটিএমের দিকে রওনা দেয়। এটিএমে লুটপাট চালানোর পর তারা গাড়িতে করে উত্তরায়ণে ঢোকার চেষ্টা করে। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিলে গাড়ি ঘুরিয়ে তারা হিমাঞ্চল বিহারে যায়। তারপর সেখানে গাড়ি ফেলে তারা চলে যায়। সিসি ক্যামেরায় এরপর তাদের লেক্সিকন মোড়ে দেখা যায়। হিমাঞ্চল বিহারে যেখানে গাড়িটি উদ্ধার হয় সেখানে একটি ভাঙা দেওয়াল রয়েছে। সেই জায়গাটি দিয়ে পঞ্চনই নদী পেরিয়ে লেক্সিকন মোড় যাওয়া যায়। পুলিশের অনুমান, সেই রাস্তা দিয়েই ওই চারজন লেক্সিকন মোড়ে উঠেছিল। সেখান থেকেই বাসে চেপে ওই দুষ্কৃতীরা নিজেদের গন্তব্যে চলে যায় বলে মনে করা হচ্ছে। যেভাবে পাকা মাথায় গোটা অপারেশন চালানো হচ্ছে তা তদন্তকারীদের বেশ ভাবাচ্ছে।
এটিএম লুটের পর পুলিশের টহলদারি ভ্যান দুষ্কৃতীদের গাড়ির পিছুধাওয়া করেছিল। তবে সেই সময় দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য করে, বিশেষ করে তাদের ব্যবহার করা গাড়িটির টায়ার লক্ষ্য করে কী কারণে গুলি চালানো হল না বলে প্রশ্ন উঠেছে। এর জেরে কেউ কেউ শাস্তির মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা ছড়িয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাতে দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করা পুলিশকর্মীদের একাংশের দাবি, এটিএমের সামনে দাঁড়ানো গাড়িটি নিয়ে যে সেখানে লুটপাট চালাতে আসা হয়েছে তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। হাঁকডাক দিয়ে উলটো পাশ দিয়ে ঘুরে আসতেই ওই গাড়িটি এলাকা থেকে বেরিয়ে যায়। সেবক রোডের দিকে থাকা আরেকটি টহলদারি ভ্যানের সামনে দিয়ে ওই গাড়িটি দ্রুতগতিতে গেলেও সেক্ষেত্রে ওই ভ্যান থেকে কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হল না বলে প্রশ্ন উঠেছে।