তমালিকা দে, শিলিগুড়ি : স্কুলে ভর্তি হতে এসে ফিরে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। পরিকাঠামোর অভাবে এমনই অবস্থা জ্ঞানভারতী বিদ্যাপীঠে। রাজ্য সরকারের তরফে সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের ভর্তি করার জন্য বিভিন্নরকমের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকের নিজেদের স্কুলের এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝানোর পরেও বেশিরভাগ স্কুলেই হাতেগোনা পড়ুয়া ভর্তি হচ্ছে। সেখানে এই স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করানোর জন্য লাইন পড়ছে অভিভাবকদের। কিন্তু স্কুলের পরিকাঠামো এমনই যে কর্তৃপক্ষ চাইলেও পড়ুয়াদের ভর্তি করাতে পারছেন না।
প্রধান শিক্ষিকা ববিতা শা জানান, পরিকাঠামোর উন্নত করার কথা পুরনিগম থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে অনেকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও কোনও পরিবর্তন হয়নি।
স্কুলে ঢুকতেই দেখা গেল কিছু পড়ুয়া বেঞ্চে আবার কিছু পড়ুয়া মেঝেতে বসে ক্লাস করছে। মাঝেমধ্যেই স্কুলে উপস্থিতির হার বেশি হলে ক্লাসরুমের বাইরে পড়ুয়াদের বসিয়ে ক্লাস করানো হয়ে থাকে বলে স্কুলের শিক্ষিকারা জানালেন। এক শিক্ষিকা বলেন, ‘অন্যান্য স্কুল যেখানে চেষ্টা করে প্রতিদিন উপস্থিতির হার বেশি রাখতে সেখানে আমরা ভাবি, যাতে মাঝারি উপস্থিতি থাকে। কারণ সব পড়ুয়া এলে বসতে দেওয়ার জায়গা নেই।’
প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান ও মেয়র গৌতম দেব স্কুলটি পরিদর্শন করে যাওয়ার পরেও কোনও পরিকাঠামোগত উন্নতি হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলার তথা স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক পিন্টু ঘোষ বলেন, ‘স্কুলে আগে শৌচালয়ও ছিল না। সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। এলাকার দুটো হাইস্কুলের সঙ্গে তাদের সকালের শিফটে স্কুলটি চালানোর জন্য কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনও হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের তরফেই পজিটিভ সাড়া পাওয়া যায়নি।’
শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগরপল্লি এলাকায় থাকা হিন্দিমাধ্যম এই প্রাথমিক স্কুলটিতে বর্তমানে ২০০-রও বেশি পড়ুয়া রয়েছে। সেই অনুপাতে শিক্ষকও আছেন। তবে ক্লাসঘর মাত্র একটি। সেখানেই চলে প্রাকপ্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের ক্লাস। শহরের স্কুলগুলোর কাছে যেখানে পড়ুয়া ভর্তি করা একটা চ্যালেঞ্জ সেখানে হাইস্কুলের অধীনে না থেকেও শহরের বুকে থাকা উপযুক্ত পরিকাঠামোহীন এই স্কুলটিতে পড়ুয়াদের ভিড় থাকে প্রতি বছর। স্কুলে কোনও নির্দিষ্ট খেলার জায়গা না থাকায় পড়ুয়ারা রাস্তাতেই খেলাধুলো করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘এই এলাকায় হিন্দিমাধ্যম স্কুল হিসেবে আমাদের স্কুলটি খুব জনপ্রিয়। পরিকাঠামো থাকলে আরও পড়ুয়া ভর্তি নিতে পারতাম। কিন্তু সেই সুযোগও নেই।’
কেন একটি সরকারি স্কুলে এত পড়ুয়া থাকা সত্ত্বেও সরকারি কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না? শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দিলীপকুমার রায় বলেন, ‘স্কুলটি একটি ভাড়াবাড়িতে বহু বছর ধরে চলছে। সেখানে পরিকাঠামো বাড়ানোর মতো সুযোগ নেই।’