Siliguri | সাড়ে তিন কোটির প্রতারণায় ধৃত পুরকর্মী

Siliguri | সাড়ে তিন কোটির প্রতারণায় ধৃত পুরকর্মী

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : সাইবার ক্রাইম, আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের জারি করা ওয়ারেন্ট থেকে সিবিআই জুজু- নানাভাবে ভয় দেখিয়ে কলকাতার এক প্রবীণের সঙ্গে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগে পুরনিগমের এক মহিলা কর্মীকে গ্রেপ্তার করল লালবাজারের সাইবার পুলিশ স্টেশনের আধিকারিকরা। শনিবার বিশেষ দলটি শিলিগুড়িতে এসে আশ্রমপাড়ার বাড়ি থেকে বছর ৫২-র ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতের নাম দেবযানী নাগ বিশ্বাস। দেবযানী বর্তমানে ২ নম্বর বরো অফিসে লোয়ার ভিডিশন ক্লাক পদে কর্মরত, জানিয়েছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলার শ্রাবণী দত্ত। ঘটনায় অপর অভিযুক্ত হায়দরপাড়ার বাসিন্দা এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করেন তদন্তকারীরা। তার নাম কুন্দন মিশ্র। ফালাকাটায় বাড়ি হলেও বাবার চিকিৎসার কারণে ওই আইনজীবী তিন বছর ধরে পরিবার নিয়ে হায়দরপাড়ার এক অ্যাপার্টমেন্টে থাকছে। এদিন দুজনকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তুলে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়েছে সাইবার পুিলশের বিশেষ টিম।

অভিযোগ, গড়িয়াহাটের এক প্রবীণের কাছে গতবছর সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ একটি ফোন আসে। রিসিভ করার পর উলটোপাশ থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (ট্রাই) কর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়। সে জানায়, ওই প্রবীণ নাকি একটি অশ্লীল ভিডিও পর্ণ সাইটে আপলোড করেছেন। প্রতারিতর অভিযোগ, ‘আমি বিষয়টি অস্বীকার করলে, সে ফের দাবি করে এই ফোন নম্বর ব্যবহার করা ডিভাইস থেকেই নাকি ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে।’ তারপর ধীরে ধীরে প্রবীণকে প্রতারণার জালে ফাঁসাতে শুরু করে চক্রটি। রীতিমতো হুমকির সুরে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বই পুলিশ মামলা শুরু করেছে। প্রবীণের ফোন নম্বরটিও ‘ট্রাই’ ব্যান করবে বলে জানানো হয়।

তারপর প্রতারিতর কাছে দ্বিতীয় ফোন আসে। অভিযোগ, মুম্বই পুলিশের এসআই পরিচয়ে বিক্রম সিং নামে এক ব্যক্তি ফোনে দাবি করে, তঁার বিরুদ্ধে অশ্লীল ভিডিও আপলোডের অভিযোগে সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। এরপর আসে ভিডিও কল। সেখানে আনন্দ রানা নামের এক ব্যক্তি নিজেকে মুম্বইয়ের সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দেয়। প্রবীণের অভিযোগ, ‘সে জানিয়েছিল, আমি আর্থিক নয়ছয়ের মামলাতেও জড়িয়ে পড়েছি। সুপ্রিম কোর্ট থেকে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।’

এরপর হোয়াটসঅ্যাপে সুপ্রিম কোর্টের নামে একটি ভুয়ো ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রতারিত ব্যক্তি। তাঁর পরিবার সম্পর্কে সবকিছু জেনে নেওয়ার পর অভিযুক্ত প্রবীণকে তিনটি বিকল্প দেয়। এরমধ্যে একটি ছিল, তাদের কথামতো সব কাজ করতে হবে। বাকি দুটোর মধ্যে একটি ছিল, গ্রেপ্তার হতে হবে কলকাতায়। দ্বিতীয়টি, মুম্বইয়ে এসে দেখা করতে হবে। এরপর ওই ব্যক্তির মিউচুয়াল ফান্ড, ব্যাংক সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য শোনা হয়।

অবশেষে ‘সিবিআই কনসেন্ট টু টার্মস অফ কনফিডেনশিয়ালিটি এগ্রিমেন্ট’ নামে একটি পিডিএফ ফাইল পাঠানো হয়। অভিযোগ, সেখানে সিবিআই-এর ভুয়ো সিলও ছিল। এরপর খোলস ছাড়ে প্রতারকরা। পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। বলা হয়, কাজ শেষের পর টাকার কিছুটা অংশ ফেরানো হবে। স্বাভাবিকভাবেই ঘাবড়ে যান ওই প্রবীণ। ঝামেলা থেকে বঁাচতে িনজের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে চক্রের তরফে দেওয়া ১২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অক্টোবরের ১০ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩ কোটি ৪০ লক্ষ পাঠান তিনি। এরমধ্যে কুন্দনের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ৩০ লক্ষ টাকা। দেবযানীর ২৫ লক্ষ টাকা।

প্রবীণের অভিযোগ, পুরো টাকা পাঠানোর পর মামলার গতিবিধি জানতে সাইবার ক্রাইম বিভাগের আধিকারিক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন, তবে উলটোপাশ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া মেলে না। পরবর্তীতে প্রতিটা নম্বর থেকে ব্লক করে দেওয়া হয় তাঁকে। প্রতারণা টের পেয়ে অক্টোবরের ৩০ তারিখ লালবাজারের সাইবার পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

তদন্তকারী দলটি এদিন প্রথমে হায়দরপাড়ায় কুন্দনের বাড়িতে আসে। সেখানে তাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে দেবযানীর বাড়ির ঠিকানা পায় তারা। দেবযানীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তােক পাকড়াও করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দুজনেই চক্রের অন্যতম মাথা। কাজের সূত্রে তাদের পরিচয় হয়েছিল। পুরনিগম সূত্রে খবর, দেবযানী এর আগে দীর্ঘদিন পুরনিগমের ভবনে জলের ট্যাংক ভাড়া দেওয়ার সেকশনে কাজ করেছে। তারপর একাধিক বরো অফিসে কাজের পর বর্তমানে ২ নম্বর বরোতে ছিল।

ওই বরো চেয়ারম্যান আলম খান বললেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। ওই মহিলা আমাদের কার্যালয়ে ক্যাশ সামলাতেন।’ শ্রাবণীর কথায়, ‘দেবযানীর স্বামীর আগে দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রীর দোকান ছিল। সেটা কয়েকমাস ধরে বন্ধ। কে ভেতরে ভেতরে কী করছে, তা বলা মুশকিল।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *